বরগুনা অনলাইন : প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে কিছু ঘোরাঘুরি করে আবারও স্বজনদের কাছে ফিরতেন ফিরোজা বেগম। কিন্তু ২০১৭ সালের জুন মাসের একদিন বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরেননি ৫২ বছরের এই নারী। ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর স্বামী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে মিলে ফিরোজা বেগমের অনেক খোঁজাখুজি করেও পাননি। মানসিক ভারসাম্যহীন ফিরোজা একদিন ফিরবেন- এমন আশায় পুলিশকেও জানায়নি পরিবার। প্রায় তিন বছর পর আশ্চর্যজনকভাবে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দুর্গম সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছেন ফিরোজা।
ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে ঘুরতে বেরিয়ে ‘নিখোঁজ’ ফিরোজা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাকে ফেরত দেওয়ার পর বিজিবি তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। শনিবার পুলিশের সহায়তায় ফিরোজা ফিরে পেলেন তার স্বজন-পরিবার। মায়ের সন্ধান পেয়ে ছেলে সুমন মিয়া এসে ফিরোজাকে বাড়ি নিয়ে যান।
বরগুনা জেলা সদরের কালিরতভোগ গ্রামের চান মিয়ার স্ত্রী ফিরোজাকে পেয়ে পরিবারে এখন ঈদের আনন্দ বইছে।
সিলেট জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী শাহ আরেফিন টিলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভারতে চলে যান ফিরোজা। ‘অনুপ্রবেশের’ অভিযোগে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রথমে তাকে আটক করে। এরপর কথাবার্তায় বাংলাদেশি ও মানসিকভাবে অসুস্থ বুঝতে পেরে বিএসএফ তাকে বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু বিজিবিও তার কথাবার্তা বুঝতে না পেরে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
অস্পষ্ট কথাবার্তা হলেও পুলিশ বুঝতে পারে ফিরোজার বাড়ি বরগুনা জেলায়। এরপর সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে বরগুনা সদর থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরিচয় সনাক্ত করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যে পুলিশের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ছেলে সুমন মিয়া এসে ফিরোজাকে নিয়ে যান। কোম্পানীগঞ্জ থানায় মাকে দেখতে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন ছেলে সুমন; চোখে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। তখন মায়ের মুখেও হাসি ফোটে।
এদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ফিরে পেতে সহায়তা করায় সিলেট জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সুমন মিয়া। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও ফিরোজা বেগম ছেলেকে চিনতে পেরেছেন। কোম্পানীগঞ্জ থানায় মা-ছেলের মিলন দৃশ্য দেখে অনেকে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে গিয়ে তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।