গোলাম কিবরিয়া, বার্তা সম্পাদক : বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্ত ১৪ কিশোর আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা করেছে শিশু আদালত। বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান আগামী ২৭ অক্টোবর রায় ঘোষনার দিন ধার্য করেছেন। এ সময় কিশোর আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিল।
অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর আসামিরা হলো, মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী (১৭+), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫+), মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান (১৬+), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬+), জয় চন্দ্র সরকার চন্দন (১৭+), মো. নাইম (১৭+), মো. তানভীর হোসেন (১৭+), নাজমুল হাসান (১৪+), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫+), মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ মহিবুল্লাহ (১৭+), মারুফ মল্লিক (১৭+), প্রিন্স মোল্লা (১৫+) রাতুল সিকদার জয় (১৬) ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬+)।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সকল আসামির পক্ষে বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। বুধবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি খন্ডন শেষে আদালতের বিচারক রায়ের দিন ধার্য করেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বুধবার এই মামলার যুক্তিতর্কের অবশিষ্ট অংশ আদালতে উপস্থাপন করেছি। যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ২৭ অক্টোবর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত। আসামী পক্ষের আইনজীবী মো. শাহজাহান বলেন, আমি আসামীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছি। সাক্ষ্যদের জেরা করেছি। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আদালতের কাছে বলেছি। আমার আসামীরা নির্দোষ। কথিত ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাদের বিচার করেছে। আমার বিশ্বাস কিশোর আসামীরা নির্দোষ প্রমানিত হবে।
এদিকে মামলার ধার্য তারিখ থাকায় সকাল নয়টার দিকে আদালতে হাজির হয় এ মামলায় জামিনে থাকা আট অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি। কড়া নিরাপত্তায় বরগুনা কারাগারে শিশু ওয়ার্ড থেকে ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। আদালতে আসা সকল বিচার প্রার্থীদের তল্লাসী করে ভিতরে ঢুকানো হয় ।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আদালতের কাছে সকল আসামিদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি । আমরা আশা করি আদালত এই মামলার সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবেন। অপর দিকে জামিনে থাকা আট আসামিকে নিজ নিজ আইনজীবীর জিম্মায় দেয় আদালত। রায় ঘোষনার দিন আইনজীবীকে আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ২৪ জনের নামে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও চার আসামিকে খালাস প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগিরা। ওই দিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরে বিকেলে রিফাত শরীফ মারা যায়। পরদিন ২৭ জুন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।