খরস্রোতা খাকদোন নদী এখন মরা খাল

খরস্রোতা খাকদোন এখন মরা খাল

প্রভাবশালীদের দখলে বরগুনার খরস্রোতা খাকদোন নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। যারা ক্ষমতায় পারছেন না তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে দখল করছেন নদীর দুই পাড়।

এদিকে নদী মরে যাওয়ায় হচ্ছে না জোয়ার ভাটা। বছরের পর বছর স্থির হয়ে থাকা পানিতে জমছে আবর্জনা। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। হচ্ছে মশার বংশবিস্তার। কৃষক ভুগছেন পানি সংকটে। বণিক সমিতি বলছে, দখল উচ্ছেদ করে নদী খনন করলে নদী পথেই কম খরচে পণ্য পৌঁছাবে বরগুনায়। যার সুবিধা ভোগ করবে জেলার ১২ লাখ মানুষ।

এক সময় ২৫০ মিটার গভীর খাকদোন নদীর প্রশস্ত ছিল ৭৫০ মিটার। নদীর গভীরতা এবং জোয়ার ভাটা দেখেই নদী পথে এ অঞ্চলের ব্যবসা শুরু হয়। দুই পাড়ে গড়ে ওঠে বসতি। কিন্তু স্থানীয় বাসীন্দারা বলছেন, নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের দুর্বলতায় নদীর দুই পাড় দখল হতে শুরু করে। এর সূচনা ২০০৮ সালে। বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে নদী তীর ভরাট করে প্রথম বালুর ব্যবসা শুরু করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। কিছুদিন পরেই সেখানে নির্মাণ করা হয় বহুতল ভবন। কোনো বাঁধা না পেয়ে নদীর পশ্চিম দিকে ক্রোক এলাকায় নদী ভরাট করে ইট, বালু, রড ও সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শুরু করে দখলদাররা।

নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দখলদারের তালিকায় রয়েছে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র শাহাদাৎ হোসেন। তিনি গড়ে তুলেছেন ইট-বালুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আছেন বিএনপি নেতা রুস্তুম আজাদের হোটেল সী ভিউ ইন্টারন্যাশনাল। প্রভাবশালী ঠিকাদার কামাল নায়েবের বহুতল বিলাসী ভবন, অবৈধ করাতকল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। স্থানীয়দের আন্দোলনের পরে দখলদারদের পৃথক পৃথক তালিকা প্রকাশ করে বিআইডাব্লিউটিএ ও নদী রক্ষা কমিশন। তাদের তালিকায় এমন কয়েক হাজার দখলদারের নাম রয়েছে।

বরগুনা শহর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, নদী বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের গাফিলতিতে খাকদোন নদীর চান্দখালী থেকে বড়ইতলা পর্যন্ত অন্তত ৭ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত দুই হাজার বসতঘর নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা। বহুতল ভবন আছে অসংখ্য।

প্রভাবশালীদের দখলে বরগুনার খরস্রোতা খাকদোন নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে
প্রভাবশালীদের দখলে বরগুনার খরস্রোতা খাকদোন নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে

নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মনির হোসেন কামাল বলেন, বছরের পর বছর শুধু দখল হতেই দেখেছি, উচ্ছেদের কথাও শুনেছি। কিন্তু কখনো উচ্ছেদ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। টাকার বিনিময়ে চুপ করে বসে থাকে সবাই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতির (বেলা) সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, দখলের সব কৌশলই অবলম্বন করেছে দখলদাররা। যারা প্রভাব খাটিয়ে দখল করতে পারেনি তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে দখল করেছে। এসব দখলবাজীর মূল হোতা নদী বন্দর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

খাকদোন নদীর পূর্ব দিকের ঘটবাড়িয়া বাজার এলাকার কৃষক খবির মোল্লা, সোবাহান গাজী জানান, নদী দখল হয়ে যাওয়ায় পানি সংকটে ব্যাহত হচ্ছে এলাকার কৃষি কাজ। ফসলি জমিতে পানি সংকটের কারণে বছরে দুই বার ফসল ফলাতেও কষ্ট হয়।

বণিক সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, বরগুনা মহকুমা হবার আগে থেকেই নদীপথে মালামাল আনতে পারতো ব্যবসায়ীরা। জেলা হবার পর শহরে জমি দখলের হিড়িক পরে যায়। নদীর দুই পাড় দখল করে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক পথে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনছেন। এতে খরচ বাড়ছে।

তবে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, দখলদারদের তালিকা হাতে পেয়েছেন তারা। যত বড় প্রভাবশালীই হোক, যে কোনো মূল্যে দখল করা হবে খাকদোন নদী।

রাইজিংবিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *