বরগুনার কৃতি সন্তান ডা. ফজলুল করিম,

বরগুনার কৃতি সন্তান ডাঃ ফজলুল করিম, এমবিবিএস, এমফিল, পিএইচডি, এফসিপিএস। আমার বড় চাচা। তিনি ১৯৩৬ সালে বরগুনার বেতাগী উপজেলার কালীকাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিএস এবং ১৯৬৪ রেনাল ফিজিওলোজি এর উপর এমফিল সম্পন্ন করেন জিন্নাহ পোষ্টগ্রাজুয়েড মেডিকেল সেন্টার থেকে।
তার দক্ষতার কারনে একই বছর জিন্নাহ পোষ্টগ্রাজুয়েড মেডিকেল সেন্টার তাকে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ২ বছর পর ১৯৬৬ সালে সে এসিসট্যান্ট প্রফেসর পদে উন্নিত হন। এই সময় তিনি হাইপোথারমিয়া, রেনাল হেমোডাইনামিক্স, ব্যারোরেসিপটোর এবং ভেনাস টোন বিষয় গবেষনা করেন। তার গবেষনার কারনে কমনওয়েলথ স্কলার হিসেবে “নার্ভাস কন্ট্রোল অফ দা হার্ট এন্ড সার্কুলেশন থ্র রিফ্লেক্স এক্টিভিসন অফ সিম্পেথেটিক এফেরেন্ট নার্ভভাস” বিষয়ে পিএইচডি করার জন্য ১৯৬৮ সালে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইংল্যান্ড) ফিজিওলজি বিভাগে যোগদান করেন। লিডস ইউনিভার্সিটি ১৯৭১ সালে তাকে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮০ সালে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে উন্নিত হন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে তার অসমান্য অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে “রিডার ইন কারডিওভাস্কুলার ফিজিওলজি” সম্মানে তিনি ভুষিত হন।
এছাড়া তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে ১৯৮০ সালে ইউনিভার্সিটি অফ আলবারটা এবং ১৯৯৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ হংকং এ দায়িত্ব পালন করেন।

তার অসমান্য অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি ‘অনারী ফেলো অফ বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন’ হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ফেলোশিপ পরিক্ষার স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন এর জন্য কাজ করেন এবং বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশনকে প্রমোট করতে সাহায্য করেন।
ডাঃ ফজলুল করিম এবং প্রফেসর রোগার হেইন্সওরথ ‘’স্টাডি অফ ইন্ট্যারেকশন বিটুইন ফিজিউলজি অফ দা ল্যাঙ, হার্ট, সার্কুলেশন এন্ড কিডনি’’ বিষয় বিশেষ অবদান রাখেন।
“Renal nerve activity during atrial receptor stimulation” এবং “Role of adenosine in producing an increase in blood flow to skeletal muscle during exercise” এই দুটি গবেষণা শক্তিশালী রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়। বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন জার্নালে যেমনঃ জার্নাল অফ ফিজিওলজি, আমেরিকান জার্নাল অফ ফিজিওলজি, ফ্লাগার আর্কাইভ এবং সার্কুলেশন রিসারস এ চিকিৎসা শাস্রের বিভিন্ন বিষয়ে তার পেপার প্রকাশিত হয়েছে।
“Congestive heart failure and hypertension” সম্পর্কে তার গবেষণা চিকিৎসা শাস্রে অসামান্য ভুমিকা পালন করেছে।
তিনি জগত বিখ্যাত বিভিন্ন গবেষকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় গবেষণা করেন। তিনি শুধু গবেষণা করেই থেমে থাকেননি বরং গবেষনায় নিয়োজিত ছাত্রদের এবং সহকর্মীদের তিনি জ্ঞান, উদ্দিপনা, উৎসাহ দিয়েছেন। তার ছাত্র এবং সহকর্মীদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তার প্রভাব এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তিনি ছিলেন সকল লেভেলের একজন ডেডিকেটেড শিক্ষক। মেডিকেল, ডেন্টাল এবং ফিজিওলজির শিক্ষার্থীরা তার লেকচার উপভোগ করত।
তার ইচ্ছা এমং নামানুসারে ২০০৮ সালে বরগুনার কলেজ রোডে ” এফ এম স্কুল” প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই মানুষটি ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তার সব অপরাধ ক্ষমা করে তাকে জান্নাত দান করুন।

-আবদুল্লাহ আল আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *