পৌর নির্বাচন : আ’লীগে একাধিক, বিএনপির ১ জন প্রার্থী

আসন্ন বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মাঝে শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। একদিকে চলছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ, অন্যদিকে ভোটারদের উৎসাহ উদ্দীপনাও কম নয়। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও, একক প্রার্থী নিয়ে ভাবছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। রয়েছে শক্তিশালী সতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে ভোটারদের জল্পনা-কল্পনা ও প্রচারনার শীর্ষে উঠে আসছে সম্ভাব্য পাঁচ মেয়র প্রার্থীর নাম।

এদিকে তফসিল ঘোষনার পূর্বেই প্রার্থীরা একদিকে নিজ দলীয় মনোনয়ন পেতে শুরু করেছেন লবিং, অন্যদিকে রাত-দিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাধারণ ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে। অনেক আগে থেকেই ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন প্রার্থীরা। তবে অনেক আগে থেকে গণসংযোগে আসা প্রার্থীরা, বর্তমানে কেউ কেউ দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্তে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

১৯৭৩ইং সালে বরগুনা পৌরসভা স্থাপিত হয়। পরে ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে এ পৌরসভাটি। এখানকার মোট ভোটার রয়েছে ১৯ হাজার ৮৮৭ জন (২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত)। দীর্ঘ্যদিন এ পৌরসভাটি বিএনপি’র দখলে থাকলেও, ১৯৯৯ইং সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলেই রয়েছে পৌরসভার মেয়র পদ। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, নিজস্ব দলীয় কোন্দলের কোন প্রভাব না পড়লে, এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর জয়লাভ করার সম্ভাবনা বেশী। তবে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কোন ধরনের কোন্দল সৃষ্টি হলে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভোটের ফলাফল পাল্টে যেতে পারে।

আসন্ন বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আলোচনার শীর্ষে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বরগুনা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শাহাদাত হোসেন, বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ন-আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: হুমায়ূন কবির, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও পৌর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো: নুরুল আমিন। এছাড়া সদর উপজেলা জাতীয় পার্টি’র(এরশাদ) আহবায়ক সার্জেন্ট (অবসর) এম এ জলিল এর নাম শোনা যাচ্ছে।

বরগুনা পৌরসভায় বর্তমানে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: শাহাদাত হোসেন। তিনি স্কুল পর্যায় থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। এরপর প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবে ব্যবসা করেন। ২০০১ সালে বরগুনা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে, ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান মিয়াকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। এ বছরও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আশাবাদী।

মো: শাহাদাত হোসেন বলেন, শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধন, সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের জন্য ভোটাররা আমার উপর খুবই সন্তষ্ট। মেয়র হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করার পর আগের চেয়ে আমার জনপ্রিয়তা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের জন্য দলেরও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমি আশাবাদী, উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে দল পুন:রায় আমাকেই মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দিবে। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করার ইচ্ছা নাই।

১৯৯৯ ও ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে, ২০১১ সালের পৌর নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান মিয়া। তিনি ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলেও, এ বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান ১৯৬৮ সালে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে তাঁর রাজনীতি শুরু করেন। এরপর ১৯৭৭ সাল থেকে কমিউনিষ্ট পার্টি করে, ১৯৯৮ সালের ১৬ আগষ্ট আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান বলেন, তৃণমূল মানুষের মতামতের ভিত্তিতে দল মনোনয়ন দিলে, আমি মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে অনেকটা আশাবাদী। আর দলের মনোনয়ন না পেলে তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ধারনা করা হচ্ছে- তিনি দলের মনোনয়ন না পেলে সতন্ত্র নির্বাচনও করতে পারেন।

মো: শাহজাহান মিয়া আরও বলেন, আমার দায়িত্ব পালনকালে পৌরসভার উন্নয়নের জন্য যেসব প্রজেক্ট আনা হয়েছিল, বর্তমান মেয়র ওইসব প্রজেক্ট এর মাধ্যমেই যতটুকু উন্নয়ন করেছেন। তবে স্বচ্ছ দরপত্রের মাধ্যমে কাজ করা হলে এসব প্রজেক্ট’র মাধ্যমে আরও উন্নয়ন করা যেত। তিনি পুন:রায় মেয়র হতে পারলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধেরও উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সম্প্রতি বিলুপ্তি কমিটির সহ-সভাপতি মো: হুমায়ূন কবির ১৯৯৯, ২০০৪ এবং ২০১১ইং  সালের বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে পাননি এবং নির্বাচনেও অংশ নেননি। তবে তিনি এ বছর আবারো দলীয় মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। হুমায়ূন কবির ১৯৭০ সালে বরগুনা থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। সেখান থেকে রাজনীতি শুরু করে, ১৯৮০ সাল থেকে একটানা ১৩ বছর জেলা যুবলীগের সভাপতি। এরপর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবং সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

হুমায়ূন কবির বলেন, তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি এবং মূল ধারার রাজনীতির সাথেই রয়েছি। কিন্তু তিনবার দলের মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। তাই আশাকরি এ বছর আমাকে দলের মনোনয়ন দেয়া হবে এবং মনোনয়ন পেলে আশাকরি সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আসন্ন পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে চান জেলা যুবলীগের সভাপতি  ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: কামরুল আহসান মহারাজ। তিনি গত পৌর নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে ছিলেন, কিন্তু তাকে দেয়া হয়নি। কামরুল আহসান মহারাজ ১৯৮০ সালে বরগুনা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছেন। এরপর জেলা ছাত্রলীগ, কলেজ ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস সহ একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করে সর্বশেষ জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই তার রাজনৈতিক জীবন মূল্যায়ন করা উচিত। পাশাপাশি সাধারণ জনগণসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তাছাড়া সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে নজরে আনা উচিত। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আছে তাদের পক্ষে সমর্থন দেয়া উচিৎ না। দলের কাছে বিশ্বস্ত, নিরাপদ, পরীক্ষিত ব্যক্তিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া উচিত। কারন স্থানীয় সরকার নির্বাচন সরাসরি তৃণমূল নেতা-কর্মী ও জনগণের নির্বাচন। তা না হলে দলীয় প্রধান এর চিন্তা ধারার প্রতিফলন হবে না।

আসন্ন বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে পৌর বিএনপির আহবায়ক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: নুরুল আমিন। তিনি গত পৌরসভা নির্বাচনেও বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে ভোটের ফলাফলে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। নুরুল আমিন ১৯৮৩ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির মধ্যে দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। এরপর জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক, পৌর বিএনপির সভাপতিসহ একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অ্যাডভোকেট মো: নুরুল আমিন বলেন, দেশ এখন জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে চলছে। তাই স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। তারপরেও দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায়, নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনা বেশী বলেই তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক সার্জেন্ট (অবসর) এম এ জলিল নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি মো: মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা বলেন, এখনও নির্বাচন বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় ভাবে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সরকারের একাধিক মিথ্যা মামলা-হয়রানির কারনে অনেক নেতা-কর্মীকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। তারপরেও দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। এখন পর্যন্ত অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন তাদের একক প্রার্থী বলেও তিনি জানান।

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত আরও আগেই হওয়া উচিৎ ছিল। এ সিদ্ধান্তের কারনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, দলে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। তবে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃনমূলের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *