বরগুনায় ১২ লাখ মানুষ, প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা মাত্র ২০

কোভিড-১৯

গোলাম কিবরিয়া, বার্তা সম্পাদক : বরগুনা জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য প্রতিদিন মাত্র ২০টি নমুনা পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালকের অফিস থেকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম বলে জানিয়েছে বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ২০টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ১০টি নির্ধারণ করা হয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জন্য, বাকি ১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হবে জেলার ছয়টি উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে। এতে প্রতিটি উপজেলায় দৈনিক দুটি করেও নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে জেলায় প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যেই জেলার সবগুলো উপজেলায় ১৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ গত কয়েকদিন ধরে আসছে না কোনো নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট। অন্যদিকে গত ১৬ জুন বরগুনা থেকে পাঠানো প্রায় ১৪১টি নমুনা পরীক্ষা না করেই ফেরত পাঠিয়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া গত ১৯, ২০ এবং ২১ জুন এই তিন দিনে পাঠানো আরো প্রায় ৬০ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের মধ্য থেকে মাত্র পাঁচটি পজিটিভ রিপোর্ট বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসে পৌঁছেছে। বাকিগুলো এখনও পৌঁছেনি।

তবে এখন থেকে বরগুনার নমুনা বরিশাল না পাঠিয়ে ঢাকার সাভারে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনামূলক চিঠি বুধবার বরগুনার সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান। সেখানেও প্রতিদিন ২০টি করে নমুনা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, একটি জেলা থেকে প্রতিদিন মাত্র ২০টি নমুনা নেওয়ার বিষয়টি প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। তিনি আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন এক থেকে দেড় শ নমুনা পাঠানো প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন বরগুনা থেকে ঢাকার সাভারের যে দূরত্ব তাতে প্রতিদিন সেখানে নমুনা পৌঁছানো অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এত দীর্ঘ সময়ে নমুনা নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থেকে যায়।

সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয় সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণরোধে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারেও খুব একটা সচেতনতা নেই স্থানীয় সাধারণ মানুষের। এতে চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন বরগুনার সচেতনমহল। করোনা উপসর্গ বিদ্যমান থাকায় নমুনা দেওয়া ওই ১৪১ জনসহ গত চার দিনে আরো প্রায় ৮০ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না আসায় জেলায় করোনা ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ ওই ১৪১ জনের মধ্যে ২০/২৫ জন দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষা করাতে পেরেছেন। সেখানে কয়েকজনের শরীরে করোনা শনাক্তও হয়েছে। বাকিরা পরীক্ষার বাইরেই থেকে গেছেন। আর যারা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হননি তাদের মধ্যে অনেকেই অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং বেড়াচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে আরো অনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট সচেতনমহল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কিট সংকট এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের অভাবেই মূলত নমুনাগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বরগুনা থেকে যেভাবে নমুনাগুলো পাঠানো হয়েছে, ঠিক সেভাবেই আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর এসব কারণেই এখন বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে সর্বোচ্চ ২০টি করে নমুনা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

বরগুনার সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বরগুনা থেকে এ পর্যন্ত ২২৮৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *