বামনা উপজেলার ২৫ আয়রণ ব্রিজ এখন মৃত্যুফাঁদ

বরগুনা অনলাইন : বরগুনায় বামনা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ২৫টি সংযোগ সেতু দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পারাপারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ঝুঁকি নিয়ে এসব সেতু পার হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে এলজিইডি আমতলী গ্রামে জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নির্মাণ করে। এরপর থেকে এ সেতুগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষার্থী ও এলাকার জন সাধারণের পারাপার হতে হয়। এতে প্রায়ই স্কুলের ছোট শিক্ষার্থীরা সেতু থেকে পড়ে গিয়ে বই-খাতা ভিজিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
বামনার পূর্ব সফিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন স্কুলে যেতে নড়বড়ে সেতুর আতঙ্ক সমন্ধে জানায়, পোলে ওঠতে ডর হরে, যদি পইড়া যাই, তবুও ওডা লাগে। পোল না পারাইলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ। পোল না পারাইলে এক মাইল বেশি হাঁইটা স্কুলে যাওন লাগে।

প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে লোহার সেতু পার হয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয়। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সেতুটি সংস্কারের জন্য এলজিইডিসহ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রধান সড়ক থেকে গ্রামের মেঠো বা পাকা রাস্তার খালের উপরের সংযোগ ব্রিজগুলো পারাপারের অযোগ্য। উপজেলার কালিকাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে ঢুষখালী বাজারগামী রাস্তায় পুরাতন বামনা খালের উপর নড়েবড়ে ব্রিজ। এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলা সদরগামী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়। ব্রিজের লোহার এঙ্গেলগুলো মরিচা ধরে ক্ষয়ে গেছে। এই নড়েবড়ে লোহার উপর এক থেকে দুই হাত অন্তর ফাঁক ফাঁক করে সিমেন্টের স্লিপার দেয়া আছে।

এদিকে বামনা সদরের পশ্চিম সফিপুর গ্রামে হাসপাতাল কোয়ার্টারের পাশে খালের উপর আয়রণ ব্রিজটি প্রায় এক মাস ধরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখানে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সাঁকোটি পার হয়ে সফিপুর গ্রামের তিন শতাধিক মানুষকে সদরে আসতে হয়। উপজেলার ঘোপখালী মাদ্রাসা সংলগ্ন খালের আয়রণ ব্রিজটির অবস্থাও বেশ করুণ। ব্রিজটির লোহার এঙ্গেল মরিচা ধরে ক্ষয় হয়ে একদিকে হেলে গেছে। এছাড়াও বৃষ্টি ও কাদায় স্লিপারে শেওলা পড়ে যাতায়াত করা পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়েন। এছাড়াও উপজেলার রুহিতা খালের উপর একটি, পশ্চিম সফিপুর খালে দুটি, কালাইয়া মোল্লাবাড়ী খালে একটি, জয়নগর খালে একটি, উত্তরকাকচিড়া জমাদ্দারবাড়ী ও ডাক্তারবাড়ীর খালে উপর দুটি, গুধিঘাটার বিভিন্ন খালে তিনটি আয়রন ব্রিজসহ উপজেলায় মোট ২৫টি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ।

উপজেলা এলজিইডির অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের আগে যোগাযোগ রক্ষার্থে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের খালগুলোয় বাঁশের সাঁকো অপসারণ করে স্বল্প ব্যয়ে লোহার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণপরবর্তী এ প্রকল্পটি এলজিইডি থেকে অন্য দফতরে স্থানান্তর হয়। ফলে আয়রণ ব্রিজগুলো সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ২৫টি সংযোগ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সেতুর পিলার নড়বড়ে হয়ে সেতু ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া সেতুর ওপর কাঠ ও সিমেন্টের পাটাতন খুলে পড়ে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

উপজেলার ঘোপখালী মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সায়মুন জানায়, মাদরাসার পাশের এ ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় গত বছর সে স্লিপার ভেঙে নিচে পড়ে তার ডান হাত ভেঙে যায়।

এ ব্যাপারে আমতলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবাহান জানান, আশা করেছিলাম জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু বাস্তবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেননি। তাই ঝুঁকি নিয়েই স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্লিপারবিহীন লোহার সেতুটি পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হয়।
বামনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেল্লাল হোসেন সরকার বেহাল সেতুগুলোয় এলাকাবাসীর জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ লোহার ব্রিজগুলো সংস্কারের দায়িত্ব এনআইজি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব গভর্মেন্ট) বিভাগের। লোকাল গভর্মেন্ট ডিভিশনের ফান্ড থেকে উপজেলা পরিষদ অথবা ইউনিয়ন পরিষদ ওই ব্রিজগুলো সংস্কার করার কথা।

এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজগুলোর তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই জরুরি ভিত্তিতে ব্রিজগুলো সংস্কার করে জনগণের দুর্দশা লাঘব করা হবে।

সূত্র : এবি নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *