বাড়িতে পাঠানো হবে প্রশ্ন, পরীক্ষা নেবেন অভিভাবকেরা!

বরগুনা অনলাইন : প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি প্রশ্ন পাঠাবেন শিক্ষকরা। সেই প্রশ্নে অভিভাবকদের সামনে বসে উত্তর লিখবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। সেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন শিক্ষক। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর পদক্ষেপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত রাখতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। খবর বিডিনিউজের।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর এবং জেলা সদরের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন কঠিন হওয়ায় এই মূল্যায়ন পদ্ধতিকে বাধ্যতামূলক করা হবে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ১৫-২৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রথম সাময়িক, ৯-২০ অগাস্টের মধ্যে দ্বিতীয় সাময়িক এবং ২-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষার হওয়ার কথা। আর ১৯-৩০ নভেম্বরের মধ্যে পঞ্চমের সমাপনীর ছক কষা রয়েছে।

গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিকের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এসএসসির ফল পিছিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এবারের এইসএসসি পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, “স্কুল বন্ধের পর থেকে সংসদ টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে ক্লাস দেখানো হচ্ছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পড়া দিচ্ছেন।

“এগুলোকে কীভাবে মূল্যায়নের মধ্যে আনা যায় আমরা সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। ওই পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি সপ্তাহে যদি মূল্যায়নটা করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো পড়বে। তাদের পড়াটাও হবে পাশাপাশি মূল্যায়নটাও হল।”

নতুন এই ভাবনার কথা তুলে ধরে সচিব আকরাম বলেন, “শিক্ষার্থীরা বাড়িতেই থাকবে, তাদের পড়া দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের মায়েদের কাছে তা পাঠিয়ে দেবেন, ওই প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে।

“মায়েরা ওই উত্তরপত্র শিক্ষকের কাছে পাঠাবেন। কেউ যদি শিক্ষকের কাছে উত্তরপত্র পৌঁছাতে না পারেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে, যারা উত্তরপত্রগুলো শিক্ষকের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।”

প্রাথমিকের শিক্ষকদের বাড়ি বিদ্যালয়ের আশপাশে হওয়ায় এবং গ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তুলনামূলক কম হওয়ায় এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করছেন গণশিক্ষা সচিব।

তিনি বলেন, “মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হয় বলে শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মায়েদের মোবাইল নম্বর আমাদের কাছে আছে।”

বিষয়টি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সে বিষয়ে কাজ করছে বলে জানান সচিব আকরাম।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ !বলেন, “বাড়ির কাজের পাশাপাশি সাত দিন পর পর প্রশ্ন তৈরি করে সেই প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরপত্র দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা উত্তর লিখে দিচ্ছে এবং শিক্ষকরা তা মূল্যায়ন করছেন। কিছু কিছু এলাকায় শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে এমনটা শুরু করেছেন।

“এখন আমরা মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে বলব, যেখানে যেখানে এমন পদ্ধতির বাস্তবায়ন করা যায় সেখানে যেন তা করা হয়। তবে এটা বাধ্যতামূলক করা হবে না।

“এমন পদ্ধতিতে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না। গ্রাম এলাকায় এমনটা করা সম্ভব। কারণ শিক্ষকরা প্রায় সবাইকেই চেনেন। শহরের করোনা পরিস্থিতিও ভিন্ন। কিন্তু শহরে অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ বেশি।”

বাড়িতে প্রশ্ন পেয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো নজরদারি ছাড়াই উত্তর লেখার সুযোগ পাচ্ছে- এমন জিজ্ঞাসায় ফসিউল্লাহ বলেন, “অভিভাবকরা বইপত্র সরিয়ে রাখবে বলেই আমরা মনে করছি। আর আমরা ধরেই নেই সব শিশুরা ভালো।

“বিষয়টি আমরা চাপিয়ে দেব না। স্বাস্থ্য বিধি মেনে যারা এমন প্রশ্ন করে বাড়িতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন তারা করবেন। আমাদের উদ্দেশ্যটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের একটু ব্যস্ত রাখা, পড়াশোনার মধ্যে রাখা।”

প্রাথমিকের ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী সংসদ টিভিতে ক্লাস দেখছে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যারা এগিয়ে আছে তাদের একটু এগিয়ে রাখা। আর যারা পিছিয়ে থাকছে তাদের জন্য অন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *