যেভাবে আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে করোনা

আনিসুর রহমান এরশাদ : ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র বদলাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস এমন বিপদ ডেকে এনেছে যে বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও সামাল দিতে পারছে না। এর জেরে বিশ্বজুড়ে আপদকালীন পরিস্থিতি জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।বিশ্বের বিভিন্ন অংশে রোগের ধরন ও গতিপথ আলাদা। দেশে দেশে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে করোনা। ভাইরাসটির নতুন একটি ধাঁচ বা স্ট্রেইনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা প্রথমদিকের সংক্রমণের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী ও ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো ব্যক্তিকে প্রথমবার আক্রান্ত করার পর দ্বিতীয়বারও আক্রান্ত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষকদের নেতৃত্বে করা ৩৩ পৃষ্ঠার গবেষণা প্রতিবেদনটি বায়োআরজিভ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড থেকে পজিটিভ খবর এলেও করোনার টিকা কবে আসবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স বলেন, আপনি কখনই কোনও ভ্যাকসিনের গ্যারান্টি দিতে পারবেন না, এটা না আসা পর্যন্ত এই বিষয়ে কিছু বলা কঠিন।

বিবর্তিত হয়ে আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে করোনা : যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যালামাস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একদল গবেষক জানিয়েছেন, নোভেল করোনা ভাইরাসের যে বিবর্তিত ধরনটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে তার সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলক-ভাবে অনেক বেশি। করোনা ভাইরাস ইউরোপে পৌঁছার পর ডি-৬১৪ জি স্পাইক প্রোটিন মিউটেট করে, অর্থাৎ বিবর্তিত হয়ে এটি আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে। মিউটেশনের ফলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ আরও জোরদার হয়েছে। অনবরত অদ্ভুতভাবে বিবর্তিত হওয়ায় করোনার প্রকোপ বিশ্বে এত বাড়তে পেরেছে। ভাইরাসটি মানবদেহে কভিড-১৯ সংক্রমণ তৈরি করে– তার ‘শত শত’ রূপান্তর চিহ্নিত করেছেন ব্রিটেন ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আরেকটি জরিপে গবেষকরা ১৯৮টি মিউটেশন চিহ্নিত করেছেন।

সার্সের চেয়ে শতগুণ সংক্রামক করোনা : সার্স ভাইরাসের তুলনায় নতুন করোনাভাইরাসটি চোখ ও শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশে ৮০ থেকে ১০০ গুণ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। সার্সের চেয়ে নতুন করোনাভাইরাস অনেক বেশি মাত্রায় সংক্রামক; চোখ ও বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে শতগুণ বেশি সংক্রমিত করতে পারে। হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে বাতাসে ড্রপলেট ছড়িয়ে পরে। বৃহস্পতিবার দ্য ল্যানসেট রেসপাইরেটরি মেডিসিন জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক মাইকেল চ্যান চি-ওায়াই। ভয়ঙ্কর করোনায় বিপর্যস্ত পৃথিবী।ভয়াবহ হুমকিতে গোটা মানবজাতি।মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিলে বিভীষিকাময় বিশ্ব এর আগে আর দেখেনি কেউ।

সোয়াইন ফ্লুর চেয়ে ১০ গুণ প্রাণঘাতী করোনা : নভেল করোনা ভাইরাসকে সোয়াইন ফ্লুর চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি প্রাণঘাতী বলে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসুস জানিয়েছেন, সোয়াইন ফ্লু বিশ্বের যে ক্ষতি করেছিল, যে পরিমাণ মানুষ মেরেছিল, তার দশগুণ ক্ষতি এবার করেছে করোনা ভাইরাস। ভয়াবহ ভাইরাসটি সোয়াইন ফ্লুর চেয়েও অনেক দ্রুত অনেক বেশিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত গতিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ বেড়েছে, সে তুলনায় এর প্রাদুর্ভাব কমার গতি শ্লথ।

৭০ ভাগ মানুষকে সংক্রমিত করবে: মানুষকে ভাইরাসটি বিশ্বের আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যান্ড রিসার্চ পলিসির (সিআইডিআরআইপি) গবেষকরা জানিয়েছে, কোভিড-১৯ সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস, কোনো ব্যক্তির এটিকে প্রতিরোধ করার ইম্যুনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। এই ভয়ংকর ভাইরাসটি যতক্ষণ না সম্ভব সবাইকে সংক্রমিত করবে, ততক্ষণ এটি পৃথিবীতে টিকে থাকবে। মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ থেকে ৭০ ভাগকে সংক্রমিত না করা পর্যন্ত এই ভাইরাস কিছুতেই ক্ষান্ত হবে না। কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন শুধু ভাইরাসকে সংক্রমণ বা বিকাশ ধীর করতে সহায়তা করবে। যতদিন না কোনো ভ্যাকসিন বেরোচ্ছে এই ভাইরাসকে প্রতিহত করার মতো, ততদিন আমাদের পরিস্থিতির উপর লাগাম টেনেই এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে হবে।

২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকবে করোনা: সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএইচ চ্যান স্কুলের পাঁচজন গবেষক দাবি করেন, ‘করোনাভাইরাসটির হুমকি ২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’ ভাইরাস দীর্ঘদিন এই পৃথিবীতে থাকতে পারে। কারণ সংক্রমণের ক্লাস্টারগুলো থাকলে রোগটি নিম্নস্তরে চলতেই থাকবে। ফলে ফের আক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়।যতদিন না পর্যন্ত পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে ততদিন মুক্তি পাওয়া যাবে না এই ভাইরাস থেকে। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ সংক্রমিত হয়ে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পরেই ভাইরাসটি অকার্যকর হতে শুরু করবে।

করোনা রোগীরা সুস্থ হলেও জটিলতায় ভোগেন: ব্রিটেনের ডাক্তাররা বলছেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ ব্যক্তি প্রায় বছরব্যাপী এ রোগ সংক্রান্ত নানা জটিলতা বহন করেন। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুস ও হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা রয়ে যায়। অনেকে স্ট্রোক করতে পারেন আবার অনেকের মস্তিস্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘকালীনভাবে শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করেন। চরম ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট ও প্যানিক অ্যার্টাকে ভুগেন। কখনো পেট খারাপ, কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, হাতে ব্যথাসহ নানা সমস্যা। কিছু কিছু মহামারী বিশেষজ্ঞ এটিকে ‘পোস্ট-কোভিড অক্ষমতা’ বলে দাবি করেন।

করোনার ১৩ উপসর্গ চিহ্নিত জাপানে : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সতর্কসংকেত হিসেবে ১৩টি উপসর্গ চিহ্নিত করেছে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১. ঠোঁট বেগুনি রঙের হয়ে যাওয়া ২. দ্রুত শ্বাস নেওয়া ৩. হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি ৪. অল্প একটু হাঁটাচলা করাতেই শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ৫. বুকে ব্যথা ৬. শুয়ে থাকতে না পারা, উঠে না বসলে শ্বাস নিতে না পারা ৭. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ৮. হঠাৎ শব্দ করে শ্বাস নিতে শুরু করা ৯. অনিয়মিত নাড়ির স্পন্দন ১০. মলিন চেহারা ১১. অদ্ভুত আচরণ করা ১২. অন্যমনস্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ১৩. বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া, উত্তর দেওয়ায় অপারগতা।

ডায়রিয়াও হতে পারে করোনার অন্যতম উপসর্গ : জ্বর, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, গা-হাত-পা ব্যথা ইত্যাদি নেই মানেই করোনা নেই, এমন কিন্তু নাও হতে পারে। উহানের ইউনিয়ন হাসপাতাল ও টাঙ্গি মেডিকেল কলেজের বিজ্ঞানীর জানিয়েছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেটের সমস্যাও হতে পারে রোগের একমাত্র উপসর্গ। কারণ এসিই-২ নামে যে রিসেপটরের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ হয় তার প্রাচুর্য শ্বাসনালী ছাড়াও রয়েছে পাকস্থলী ও অন্ত্রতেও। করোনা আক্রান্ত রোগীর ডায়রিয়াও হতে পারে অন্যতম উপসর্গ।

করোনার নতুন উপসর্গ পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা : ক্রমাগত জিনের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে করোনার জীবাণু। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন জানায়, কোভিড-১৯-এর উপসর্গের তালিকায় যুক্ত হয়েছে পেশী ও গিঁটে ব্যথা। ১৪.৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটা ঘটতে পারে।

বেশিরভাগ করোনা রোগী স্বাদ-ঘ্রাণশক্তি হারাচ্ছেন: কোভিড-১৯ রোগে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছেন। ড. ড্যানিয়েল বোরেসটো এর নেতৃত্বে লন্ডনের গাই হাসপাতালের একদল গবেষক করোনা রোগীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এক গবেষণায় এই উপসর্গের কথা জানান। করোনায় বিপর্যস্ত ইতালির দুই শতাধিক রোগীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই তাদের স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এটা আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে কিংবা পরে উভয় সময়ই হচ্ছে। করোনার উপসর্গ হিসেবে ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এটা দ্বিতীয় গবেষণা।

উপসর্গ প্রকাশ ছাড়াই করোনা বহন করতে পারেন ব্যক্তি: অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে বা করোনার উপসর্গ প্রকাশ করার আগেই ব্যক্তি করোনাভাইরাস বহন করতে পারেন বলে তাইওয়ানের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে। জার্নাল অব দ্যা আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (জেএমএ) গবেষণাটি প্রকাশ হয়।

করোনায় আক্রান্ত বয়স্কদের অস্বাভাবিক উপসর্গ : নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক বয়স্ক রোগীর মধ্যে বেশ কিছু ‘অস্বাভাবিক’ উপসর্গ দেখতে পেয়েছেন চিকিৎসকেরা। যাদেও করোনার সাধারণ কোনো উপসর্গ নেই। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা গেছে তারা করোনায় আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা রীতিমতো বিভ্রান্ত হচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত এসব বয়স্করা ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করতে শুরু করেন। তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে ঘুমান। খাওয়া বন্ধ করে দেন। অস্বাভাবিকভাবে উদাসীন হয়ে পড়েন। কথা বন্ধ করে দেন এবং অনেক সময় হঠাৎ করেই পড়ে যান।

করোনা সংক্রমণের নতুন উপসর্গ পায়ের প্রদাহ: করোনা সংক্রমণের প্রধান উপসর্গের তালিকায় সম্ভাব্য নতুন একটি উপসর্গ পায়ের প্রদাহও (কোভিড টোস) যোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত শিশু ও তরুণদের মধ্যেই বেশি দেখা গেছে এ ধরনের লক্ষণ। গত মার্চে ইতালির কিছু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ দেখতে পান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিছু রোগীর পায়ের পাতা ও আঙুলে প্রদাহ হচ্ছে। এমনকি অঙ্গগুলোর রঙও বদলে যাচ্ছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রেও এর সন্ধান পাওয়া গেছে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজির চিকিৎসকরা কারও শরীরে কোভিড টোস দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে করোনা টেস্ট করাতে পরামর্শ দিয়েছেন।

আক্রান্ত পুরুষের শুক্রানুতেও করোনা : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষের শুক্রানুতে ভাইরাসটির উপস্থিতি দেখা গেছে। চীনের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। এর ফলে, শারীরিক সম্পকের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা আরো প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল জামা নেটওয়ার্ক গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করেছে। চীনের শাংকিউ মিউনিসিপ্যাল হসপিটালের গবেষকরা এ ব্যাপারে গবেষণাটি করেছেন।

মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে করোনা : করোনাভাইরাসের আরেকটি নতুন লক্ষণ হিসেবে দেখা দিয়েছে মস্তিষ্কের সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের অনেকের মধ্যেই অন্যান্য লক্ষণের পাশাপাশি ভুলে যাওয়া, বিভ্রান্তিসহ মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিজেদের অবস্থান বা এখন কত সাল চলছে তা মনে করতে পারছে না। চলতি সপ্তাহে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে এসংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণাটি করা হয় ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গের ৫৮ জন করোনা আক্রান্তের ওপর। এতে দেখা যায়, তাদের অর্ধেকেরও বেশি বিভ্রান্ত ও বিচলিত অবস্থায় আছে, যা মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করছে।

কম বয়সীদের স্ট্রোকও ঘটাচ্ছে করোনা : নতুন করোনাভাইরাসে বয়স্ক ও অসুস্থদের ঝুঁকির কথা এতদিন বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা আক্রান্ত কম বয়সীদের ক্ষেত্রে নতুন একটি প্রবণতা চিহ্নিত করেছেন। তারা দেখেছেন, ৫০ বছরের কম এমন বেশ কয়েকজন রোগীর স্ট্রোক হয়েছে, যাদের অন্য কোনো রোগ তো ছিলই না, কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গও ছিল মৃদু। নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হেলথ সিস্টেমের নিউরোসার্জন ডা. টমাস অক্সলি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই ভাইরাস মস্তিষ্কের বড় ধমনীগুলোতে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলে, যার ফলে মারাত্মক স্ট্রোক হয়।’

করোনাভাইরাস অকেজো করে দেয় অঙ্গ: করোনাভাইরাস শুধু শ্বাসযন্ত্র বা ফুসফুসেই নয়, এটি মানবদেহের পুরো রক্ত সংবহন তন্ত্রে আক্রমণ করে, যার কারণে একাধিক অঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়ে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা জুরিখ ইউনিভার্সিটি হসপিটালের অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক রুশিৎজকা বলেন, ‘কেবল ফুসফুসেই নয়, ভাইরাসটি ধমনী, শিরা, উপশিরা সবখানেই আক্রমণ করে। করোনাভাইরাস এন্ডোথেলিয়ামে (কোষের স্তর) প্রবেশ করে, যা রক্তনালীর প্রতিরক্ষা রেখা। এভাবেই এটি আমাদের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং মাইক্রোসার্কুলেশনে সমস্যার সৃষ্টি করে।’

ভিটামিন ডি’র স্বল্পতায় বাড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি: যাদের শরীরে ভিটামিন ডি’র স্বল্পতা রয়েছে, তাদের করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। দ্রুত ভাইরাসটির দ্বারা আক্রান্তের শঙ্কাও রয়েছে। কুইন এলিজাবেথ হাসপাতাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ও ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে অবস্থিত ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া রাসকিন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় অতিরিক্ত ওজন: করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা থাকলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে। যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ১৭ হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত কম ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে। যাদের বডি ম্যাস ইনডেক্স ৩০-এর ওপর, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকে। ফল শরীর যথেষ্ট চাপের মধ্যে দিয়ে কাজ করে।

করোনায় অন্য রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়: যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, কভিড-১৯ নতুন রোগ। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এবং এই কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা বলছে, এই ভাইরাস অন্য রোগে আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বয়স্ক, শারীরিকভাবে দুর্বলরা বেশি ঝুঁকিতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃতদের মধ্যে পাঁচটি ধরন দেখা গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ বছরের বেশি বয়স্কদের করোনায় মারা যাওয়ার হার অত্যধিক। পরিসংখ্যান বলছে, নারীদের তুলনায় পুরুষের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। যেসব মানুষ আগে থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে আছেন; বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে সমস্যা, হজমের সমস্যায় ভুগছেন- তাদের মৃত্যু হার বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে করোনা আক্রান্তদের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে গুরুতরভাবে। এ ধরনের মানুষকে লাইফ সাপোর্টে পর্যন্ত নিতে হচ্ছে। পরে বেশি সংখ্যক এ ধরনের মানুষ মারা যাচ্ছে।

ধূমপায়ীদের ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশি : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন টার্কিশ গ্রিন ক্রিসেন্টের প্রধান অধ্যাপক মুকাহিত ওজতুর্ক। ওজতুর্ক বলেন, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি। ধূমপান ও তামাকপণ্য ব্যবহারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপানের ফলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং করোনার চিকিৎসায় নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে মহামারির সময় চিকিৎসার কার্যকরতা বিলম্বিত হয়। ধূমপান মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং কাশি আটকে দিতে পারে। যার ফলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া গলায় ও ফুসফুসে আটকে থাকে। এতে আশঙ্কাজনক অবস্থা তৈরি হতে পারে।

অসুস্থদের শরীরে বেশিদিন বাঁচে করোনা : চীনের ঝেজিয়াং প্রদেশের একটি হাসপাতালের গবেষকরা দেখেছেন, যেসব ব্যক্তিরা আগে থেকেই অসুস্থ তাদের ওপর জেঁকে বসে কোভিড-১৯। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) এক প্রতিবেদনে তারা বলছেন, যারা আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ ভুগছেন তাদের শরীরে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকে করোনা। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস ও মলে থেকে যেতে পারে করোনা এবং যারা যতবেশি অসুস্থ তাদের শরীরে ততদীর্ঘ সময় থেকে যায় এই ভাইরাস। শ্বাসযন্ত্রে করোনাভাইরাসের টিকে থাকার মধ্যম সময়কাল ১৮ দিন।

বায়ুদূষণের প্রভাবে করোনায় মৃত্যুহার বেড়ে যায়: উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর বড় কারণ বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্পেন, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সের ৬৬টি প্রশাসনিক এলাকায় মৃত্যুহার বেশি। এর মধ্যে পাঁচটি অঞ্চলে মৃত্যুর হার ৭৮ শতাংশ। আর এ পাঁচ অঞ্চলই সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার। এসব অঞ্চলের বাতাসে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। হার্ভার্ডের গবেষকরা জানিয়েছেন, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের প্রভাবে কোভিড-৯ এ মৃত্যুহার বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে বায়ুদূষণের উচ্চমাত্রার কারণে দেশটিতে এতো বেশি মানুষ মারা গেছে। যেসব শহরে বিগত বছরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা কম ছিল, সেসব শহরে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হারও কম। কমের এই পরিমাণটা শতকরা ১৫ ভাগ।

৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপে কিছু হয় না করোনার: গ্রীষ্মের দাবদাহে কেভিড-১৯ ভাইরাসের মৃত্যুর কোনও সম্ভাবনা নেই। ন্যূনতম ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে এই ভাইরাসের মৃত্যু হয় না। ভাইরোলজি গবেষকরা বলছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কভিড-১৯ এর মৃত্যু হয় না। অন্তত ৯২ থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট রাখার পর শেষ হতে পারে এই মারণ ভাইরাস। ফ্রান্সের এইক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে।

ফের আক্রান্ত হতে পারে করোনা জয়ীরা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, করোনা থেকে সেরে উঠলেও ফের আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকী সেরে ওঠা ব্যক্তিদের প্লাজমায় আক্রান্তদের সেরে ওঠার সম্ভাবনাও নস্যাৎ করে দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির শীর্ষ চিকিৎসক ড. মারিয়া ভান কেরখোভে বলেন, বহু দেশে র্যা পিড সেরোলজি টেস্ট করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনও প্রমাণ নেই যে সেরোলজি পরীক্ষা কারোর শরীরের করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রমাণ দিতে পারে। বা সে যে ফের আক্রান্ত হবে না, তাও প্রমাণ করতে পারে না এই পরীক্ষা।

জীবন থেকে ১৩ বছর কেড়ে নেবে করোনা: একজন মানুষের জীবন থেকে ১৩ বছর সময় কেড়ে নিতে পারে করোনাভাইরাস। ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক করোনার প্রভাব সম্পর্কে খতিয়ে দেখতে যেয়ে এ তথ্যটির সন্ধান পান। গবেষকরা বলছেন, করোনার জন্য জীবনের হারানো সময়সীমা ছেলেদের ক্ষেত্রে হতে পারে ১৩ বছর এবং মেয়েদের ১১ বছর। গবেষণায় দেখা যায় করোনায় মৃত্যুর কারণে মানুষ তার জীবনের ১০ বছর হারিয়েছে।

করোনা ভেসে বেড়ায় বায়ুকণায় : করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের হাঁচি-কাশিতে দূষিত বায়ুকণার (পার্টিকেলস) মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। যদি বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে, তবে মহামারিতে আরও অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। গবেষকরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত মানুষ যখন হাঁচি দেন, কফ বা থুথু ফেলেন, তখন তার ভারি কণাগুলো মাটিতে এক বা দুই মিটার দুরে পতিত হয়। কিন্তু যেগুলো অতিসূক্ষ্ণ বা ৫ মাইক্রোগ্রামের ছোট কণা, সেগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এই ছোট কণা বাতাসে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে। যেতে পারে দূরেও।

চোখে থেকে যেতে পারে করোনা: নতুন একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো চলে যাওয়ার পরও ভাইরাসটি চোখে থেকে যেতে পারে। ডা. ফ্রান্সেসকা কোলাভিটার নেতৃত্বে ইতালির গবেষকরা অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে এমন একজন করোনা রোগীর কেস স্টাডি প্রকাশ করেছেন, যার নাক থেকে ভাইরাসটি চলে যাওয়ার পরও তার চোখে ভাইরাসের সংক্রামক কণা বিদ্যমান ছিল। চোখের তরলে করোনাভাইরাস দীর্ঘদিন থেকে যেতে পারে। তাই এটি সংক্রমণের সম্ভাব্য উৎস হতে পারে। এই গবেষণা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেমন নাক, মুখ এবং চোখের স্পর্শ এড়ানো এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

করোনায় একশ কোটি মানুষ আক্রান্তের শঙ্কা : আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) জানিয়েছে, দুর্বল অর্থনীতির ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে যদি জরুরি সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে মহামারি নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটি থেকে একশ কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে এবং প্রাণহানি ঘটতে পারে ১৭ লাখ থেকে ৩২ লাখ লোকের।

করোনার কারণে ৯১ ভাগ শিশু মানসিক চাপে : গত ২ মাসে উন্নয়নশীল ১৩টি দেশে জরিপ করে এ তথ্য তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন। জরিপের ফলাফলে বলা হয়, শিশুরা মানসিক বেদনা ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তবে বৈশ্বিক এই মহামারী প্রতিরোধে তারাও ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। এই সময়ে জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণ উল্লেখ করেছে শিশুরা। কারণগুলো হল, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক বেদনা এবং পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া।

করোনার অর্থনৈতিক বিপর্যয় কয়েক প্রজন্ম ভোগাবে: করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় নেমেছে তা আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে ভোগাতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় সব দেশের সমন্বিত পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লেখা মতামতে তিনি বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে এর প্রভাবে সারাবিশ্বে আগুন জ্বলতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, করোনার পরে বিশ্ব আর কখনোই একই রকম হবে না।

সংক্রমণের ঝুঁকিতে শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুতরা : করোনায় খুবই ঝুঁকিতে আছেন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ। সংঘর্ষ, যুদ্ধ ও নিপীড়নের কারণে নিজের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫৯ লাখ। এদের মধ্যে ৬৭ লাখ সিরিয়ান, ২৭ লাখ আফগান, ২৩ লাখ দক্ষিণ সুদানের শরণার্থী; অর্থাৎ তিন দেশেরই মোট শরণার্থীর ৫৭ ভাগ। নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা গ্রহণ করছেন, কিন্তু শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার আবেদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন এমন আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা ৩৫ লাখ। নিজ দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এমন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ। প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন করে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। রাষ্ট্রহীন মানুষের নেই জাতীয়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কাজের সুযোগ ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার মতো মৌলিক অধিকার। কিছু লোভী মানুষের পাপের খেসারত দিচ্ছে অনেক নিরপরাধ ও নিরীহ মানুষ।

কারাগারে বন্দিরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে : করোনার ঝুঁকিতে আছেন কারাগারের বন্দিরা। যুক্তরাষ্ট্রে ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৮, চীনে ১৭ লাখ, ব্রাজিলে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ১৫১, রাশিয়ায় ৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৬১, ভারতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪, থাইল্যান্ডে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯০২, ইন্দোনেশিয়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৭, তুরস্কে ২ লাখ ৮৬ হাজার, ইরানে ২ লাখ ৪০ হাজার, মেক্সিকোতে ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ ও ফিলিপাইনে ২ লাখ ১৫ হাজার ২৭৮, দক্ষিণ আফ্রিকা ১ লাখ ৬৪ হাজার ১২৯, ইউক্রেনে ১ লাখ ৬২ হাজার ৬০২, ভিয়েতনামে ১ লাখ ৩০ হাজার ২, কলম্বিয়া ১ লাখ ২২ হাজার ৮৫, ইথিওপিয়া ১ লাখ ১৩ হাজার ৭২৭, মিসর ১ লাখ ৬ হাজার, আর্জেন্টিনা ১ লাখ ৩ হাজার ২০৯, মিয়ানমার ৯২ হাজার, পেরু ৯১ হাজার ২৮৩, বাংলাদেশ ৮৮ হাজার ২১১, জাপানে ৭৯ হাজার ৫২, জার্মানিতে ৭৭ হাজার ১৬৬ জন, পোল্যান্ড ৮৯ হাজার ৫৪৬ জন, ইংল্যান্ড ৮৩ হাজার ১৮৯, পাকিস্তানে ৭৭ হাজার ২৭৫ জন বন্দি আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *