রিফাত হত্যা মামলার রায় : স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড অধরা মুসাসহ খালাস ৪

গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা : বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে খালাস দিয়েছে আদালত। এছাড়া ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান ২০০ পৃষ্ঠার এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ভূবন চন্দ্র হালদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।

এছাড়া এ মামলায় চার আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।

রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া খালাস প্রাপ্তদের মধ্যে মুসা বন্ড এখনও পলাতক রয়েছে।

নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন আদালত থেকে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্রে সবাই দেখেছে আমার মেয়ে তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য ধাড়ালো অস্ত্রের সামনে জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছে। আমার মেয়ের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব- বলেও জানান তিনি। তার বিশ্বাস উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন।

নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বলেন- প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে আজকে যে রায় হয়েছে এটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।

উল্লেখ্য, রিফাত হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে দুটি ভাগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন শিশু আসামি।

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া বন্ড গ্রুপ। নিহত রিফাতের স্ত্রী স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থা গুরুত্বর দেখে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠালে পথিমধ্যে রিফাত শরীফ মারা যায়।

ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।

রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গনের আশেপাশে শতশত সাধারণ মানুষ ভিড় করেন।

মিন্নির প্রতি অবিচার করা হয়েছে : বাবা

বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় ৪ জনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

তবে রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে মিন্নির বাবা বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু মিন্নির প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

আপডেট ১৪:৪০

রায় পড়া শুরু

গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা : বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু করেছেন আদালত।

বুধবার দুপুর ১টা ২৪ মিনিটের সময় এ মামলার রায় পড়া শুরু করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

আপডেট ১৩:৪০

দোয়া পড়ছেন আসামির স্বজনরা

গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা :
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে দোয়া পড়ছেন আসামির স্বজনরা
কিছুক্ষণ মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়। রায় উপলক্ষে ইতোমধ্যে কারাগারে থাকা এ মামলার আট আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতে হাজির হয়েছেন জামিনে থাকা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিও। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হয়।
এ মামলার রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য দিনগুলোর মতো আজ আদালতে ঢুকতে পারেননি আসামিদের স্বজনরা। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে আসামিদের মুক্তির জন্য দোয়া-দুরুদ পড়ছেন স্বজনরা।
মামলার আসামি কামরুল ইসলাম সাইমুনের বাবা মো. লিটন বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। তার জন্য আদালতে সাফাই সাক্ষীও দেয়া হয়েছে। আজ তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি- যাতে সাইমুন খালাস পায়। আমার ছেলে আসলেই নির্দোষ। আমি তার মুক্তির জন্য সবার দোয়া চাই।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়। মামলার ৬ নম্বর আসামি মুসা এখনও পলাতক।
১৬ সেপ্টেম্বর মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

আপডেট : ১২:৩৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *