শিক্ষায় সরকারি বেসরকারি বৈষম্য বাতিল দাবি, বরগুনায় আলোচনা সভা

গোলাম কিবরিয়া,বার্তা সম্পাদক : শিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য অনুপাত প্রথা বাতিলের দাবিতে বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকাল দশটার সময় বরগুনা টাউন হল এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট প্লাজার সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম এ সভার আয়োজন করে।

এ সময় বক্তারা বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যক্তিকে সুন্দর সামাজিক জীবনে উপযােগী করে গড়ে তােলা। আর ব্যক্তিকে সুন্দর সামাজিক জীবনের জন্য উপযােগী করে গড়তে হলে চাই জীবনঘনিষ্ঠ কর্মমুখী ও যুগােপযােগী শিক্ষাব্যবস্থা; যা সমাজ তথা দেশের জন্য কাক্ষিত জনশক্তি তৈরি করবে। আর কাঙিক্ষত জনশক্তি তৈরি করতে হলে শিক্ষাকে হতে হবে কর্মমুখী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, শিক্ষাব্যবস্থাকে অক্ষম করে রাখা হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষার সব স্তরে শিক্ষার্থীদের টেকসই ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। জীবনঘনিষ্ঠ কর্মমুখী ও যুগােপযােগী শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। এ জন্য প্রয়ােজন সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য কমিয়ে আনা।

একজন শিক্ষক নেতার মন্তব্য, ৯৭ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষাকে ৩শতাংশ সরকারিরা গলা চিপে ধরছেন। বেসরকারি শিক্ষায় অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষকদের এমপিও নেই,পূর্ণাঙ্গ ঈদ বােনাস নেই, পূর্ণ চিকিৎসা ভাতা নেই, জীবনে কারাে কারাে একটিও-প্রমােশন নেই, বিনোদন ভাতা নেই,পূর্ণাঙ্গ পেনশন নেই, পূর্ণাঙ্গ ভবিষ্যৎ তহবিল নেই, শিক্ষা সহায়ক ভাতা নেই, পাহাড়ি ভাতা নেই। শুধু নেই আর নেই এর একমাত্র সমাধান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য কমিয়ে আনা।
আবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহযােগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ নেই। যা আছে জীবনে একটি পদ সহকারী অধ্যাপক; তাও আবার অনুপাত প্রথা। এ কারণে একজন কলেজশিক্ষককে ৩০-৩৫ বছর চাকরি করেও প্রভাষক হিসেবেই অবসর গ্রহণ করতে হয়। দেখা যায়, তার ছাত্র অন্য প্রতিষ্ঠানে ৮-১০ বছর চাকরি করে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হয়ে যান। বেসরকারি কলেজ ও মাদরাসায় সহযােগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃজন করা জরুরি।

স্কেল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রয়েছে এক মহা হয়রানি। সব কাগজপত্র, যােগদান অথবা প্রথম এমপিওর সময় জমা দেয়া থাকলেও পুনরায়, বারবার সব কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আর তার জন্য গুনতে হয় ধাপে ধাপে কাড়ি কাড়ি টাকা। শিক্ষা অধিদফতরে আগের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সময় হলে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযােগী অধ্যাপক পদে অটো প্রমােশন দেয়া হলে এ মহা হয়রানিতে পড়তে হয় না। আর গুণতে হয় না কাড়ি কাড়ি টাকা!

বছরে দু’টি ঈদে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ২৫শতাংশ ঈদ বােনাস- যা দিয়ে গরুর ভাগা তাে দূরের কথা,খাসির ভাগাও নেয়া যায় না। বেসরকারি শিক্ষকদের ঈদ বােনাসের হার বা টাকার পরিমাণ কত, প্রধানমন্ত্রী জানেন কি? শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাভবন এবং ৩ শতাংশ সরকারি শিক্ষক ঠিকই শতভাগ বােনাস নিচ্ছেন আর বেসরকারিদের দিচ্ছেন এর ২৫ শতাংশ বােনাস। বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়ােজন। বেসরকারি শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ব্যাংক নেই। অবিলম্বে এই স্বতন্ত্র ব্যাংক চালু করা প্রয়ােজন। মাদরাসায় আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স নেই। অবিলম্বে সে কোর্স চালু করা জরুরি। জেলা সদরে কামিল মাদরাসাগুলােতে আরবি ভাষা কোর্স চালু করা যেতে পারে।

প্রতিটি উপজেলা সদরে একটি স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। দুঃখের বিষয়, একটি মাদরাসাও জাতীয়করণ করা হয়নি। এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সুনজর কামনা করছি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া শিক্ষক পদ আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে না হলেও ৫-১০টি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে একজন স্বাস্থ্যসেবক বা ডাক্তার পদ সৃষ্টি করে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য কমিয়ে শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া হলে সেটি তাদের পাঠদানকেআরাে বেগবান ও ফলপ্রসূ করবে। ফলে উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *