শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আকুতি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আকুতি

জোবায়ের হাসান : করোনা ভাইরাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তীব্রভাবে হামলা চালিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই এতে আক্রান্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে এখন তাকালে নিজের অজান্তেই কান্না চলে আসে। যে আঙ্গিনায় শতসহস্র শিক্ষানুরাগীর পদচারণা প্রত্যহ আন্দোলিত করতো সেখানকার সুনশান-নিস্তব্ধতা তদুপরি কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের খেলা করার দৃশ্য অবাক করে দেয়। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শহরের কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান চালু রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে তথাপি তা পর্যাপ্ত নয়। স্কুলের সরাসরি পাঠ্যক্রমের তুলনায় তা নিতান্ত নগন্য।

এহেন বিপর্যস্ত অবস্থায় সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো। এখানকার শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এখানকার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ মার্চ মাস থেকে কোন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। সর্বশেষ তারা ফেব্রুয়ারিতে বেতন পেয়েছেন। মার্চের ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকার বন্ধ করে দেয়।

স্কুল বন্ধ থাকায় পাঠদানের পাশাপাশি বেতন আদায় কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে অনলাইনে ভিডিও ক্লাস নেয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তাও অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকেও জোর করে বা চাপ দিয়ে বেতন আদায়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রণালয় শুধু একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। বেতন না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কোটি মানুষ কীভাবে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করবে তার কোন নির্দেশনা তারা দেননি। স্কুল বন্ধ থাকা এবং সরকারের এমন একপেশে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। কেউ কেউ এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বেতন না দেয়ার ব্যাপারে জনমত তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সমস্ত সম্মানিত অভিভাবকদের সমীপে বিনীত আরজ হলো-

সরকার যদি প্রাইভেট স্কুল-কলেজে কোনরূপ প্রণোদনা দেন তবেই শিক্ষার্থীদের বেতন কমানো বা মওকুফের প্রশ্ন আসবে। অন্যথায় আজ হোক কাল হোক সমূদয় বকেয়াতো পরিশোধ করতেই হবে। শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো পড়াশোনা চালিয়ে নিতে তাদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের খরচ ও পরিশ্রম মোটেও কম নয়। অনলাইনে লেকচার প্রদান, সীট প্রদান, পরীক্ষা নেয়া ও মূল্যায়ন চাট্টিখানি কথা নয়। সুতরাং এ বিষয়টি সস্মানিত অভিভাবকগণের সদয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

তাছাড়া এখন যে কোন উপায়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ালেখার টাচে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের অবস্থান থেকে সেটা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অভিভাবকগণ যদি বিনা চাপে স্বপ্রণোদিত হয়ে বকেয়াগুলো পরিশোধ করে যান তবেই সব চুকে যায়। শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে এর কোন বিকল্প নাই। কারণ শিক্ষক না বাঁচলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁচবে না আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না বাঁচলে শিক্ষার গোটা ব্যবস্থাই হুমকির মুখে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

সম্মানিত অভিভাবকদের বলি, একবার হৃদয় দিয়ে উপলব্ধির চেষ্টা করুনতো সেসব পরিবারগুলোর কথা যারা দুই-তিন মাস যাবৎ বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে তিনবেলা খেতে পারছেন কি তারা? আপনার খানিক সহযোগিতাই পারে শিক্ষককে পরিবার নিয়ে তিনবেলা একমুঠো আহার যোগাতে। সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর আসছে। ঈদের আগে অন্তত এক মাসের বেতন শিক্ষকদের প্রদান করা অতীব জরুরি এবং মানবিক। তাই যাদের পক্ষে সম্ভব বকেয়া সমেত কিছু এডভান্স দেয়ার চেষ্টা করুন।

আপদকালে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসই পারে শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে। সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র সহায়।

লেখক : একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *