আনিসুর রহমান এরশাদ : কেমন হবে করোনা পরবর্তী বিশ্ব? করোনাভাইরাস জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। করোনার থাবায় প্রতিনিয়ত প্রাণ ঝরছে। মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। মানুষের চোখের সামনে উদ্বেগ বাড়ছে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হচ্ছে।স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিতদের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে। মানবজীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে পালটে দিচ্ছে। জনশূন্য নগরী এক নতুন বাস্তবতা। মুরব্বি দেশগুলো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গাগুলোতে অস্তিত্বের সংকট তীব্র রূপ নিয়েছে। দৃশ্যমান শত্রুর বদলে অদৃশ্য শত্রু প্রতিটি দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে শত্রু-মিত্রের পুরোনো ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। মানুষ আনন্দে অপরকে জড়িয়ে ধরে না, মুখোশ খুলে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয় না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে- করোনার পর কী হবে পৃথিবীতে? করোনাভাইরাসই কি পাল্টে দেবে বিশ্বকে? করোনা পরের বিশ্ব সুন্দর না অসুন্দর হবে? আমূল পরিবর্তন আনার কোনো সুযোগ আসলেই কী রয়েছে?
এক. জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে
নভেল করোনাভাইরাস আসার আগে যে জীবন সবাই কাটিয়েছে, সংক্রমণ থেমে যাওয়ার পরে সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। লকডাউন উঠার পরও আগের মতোই লোকজনকে মাস্ক পরা, ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন ২ মিটার দূরে থাকা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, ঘরে ফেরার পর কাপড় পরিবর্তন করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দূরে থেকে কাজ করা এবং ভিড়ের সময়ে গণপরিবহন এড়িয়ে চলার প্রবণতা থেকে যাবে। হ্যান্ড গ্লাভস বা স্যানিটাইজার ব্যবহার থেকে যাবে। কারণ অচিরেই এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যেখানে প্রতি বছর একটি করে প্রতিষেধক নিতে হবে। খাবারে মানুষের শুচিবায়ু বাড়বে। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি থাকার গুরুত্ব বুঝায় ভোগের ধরন পাল্টাবে। অনলাইন স্কুলিং বা হোম স্কুলিং, অনলাইন অফিস বা ওয়ার্ক অ্যাট হোম, অনলাইন ব্যাংকিং এবং কেনাকাটা যাপিত জীবনের ভরসা হয়ে উঠবে।
দুই. চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হবে
বিশ্ব আগামী দিনে এই মহামারির শিক্ষা থেকে এমন ভ্যাকসিন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক ওষুধ আবিষ্কার করবে; এর ফলে পরবর্তী মহামারি ঠেকানো যাবে। ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সবাই উদ্যোগ নেবে। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন ওষুধে মনোযোগী হবে। চিকিৎসা অবকাঠামোর উন্নতির ফলে ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে যেকোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। বিশ্বজুড়ে উদীয়মান রোগজীবাণুগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি বাড়বে। অনলাইনে নাগরিকদের স্বাস্থ্যতথ্য সংরক্ষণ ভবিষ্যতে বাধ্যতামূলক হয়ে উঠবে। মিসাইলের চেয়ে ডাক্তার গুরুত্বপূর্ণ, সামরিক গৌরব অর্জনের চেয়ে জনস্বাস্থ্যের গৌরব অর্জন বেশি সম্মানজনক মনে করতে পারে নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ।
তিন. নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনের জন্ম হবে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়াবহতার পর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন বদলে গিয়েছিল তেমন করোনাত্তোরকালেও ঘটবে। করোনাভাইরাসের পর নতুন দর্শনের জন্ম নিতে পারে মানুষের বোধে। মানুষের সংক্রমণ এড়ানোর মানসিকতায় লুপ্ত আর্কিটাইপ বোঝার ভেতর দিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনের জন্ম হতে পারে। মানুষ বুঝবে সবাই সুরক্ষিত না হলে কেউই নিরাপদ নয়। ফলে জাতীয় ঐক্য ও বৈশ্বিক সংহতি এবং মানবিক চেতনা বাড়তে পারে। এলিটরা সব সময় নিজের কথাই ভেবেছে। তবে উচ্চবিত্তরা এখন বুঝতে পারছে সাধারণ মানুষকে হুমকির মুখে রেখে তারাও নিরাপদ নয়। এই শিক্ষা হয়েছে, মানবজাতির একাংশকে বিশুদ্ধ পানি ও ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত রেখে অন্যত্র সুস্বাস্থ্যের স্বর্গ বানানো যায় না। করোনাভাইরাস ধনী–গরিব ভেদাভেদ করে না। দেখে না কে কারখানার প্রধান আর কে শ্রমিক।
লেখাটির ভিডিও ভার্সন দেখুন এখানে
চার. স্বাস্থ্যবিধিকে গুরুত্ব দেয়া হবে
করোনাত্তোর প্রতিটি বড় কোম্পানিই হয়তো নিজ সদর দরজায় সেন্সর লাগাবে, যেনো অসুস্থ কেউই ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে। অতিমহামারী পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিই হয়তো অফিসের দরজা খুলে দেবে। ক্যামেরা দিয়ে প্রতিটি কর্মীকে মনিটর করাও স্বাভাবিক বিষয় হবে। কেউ সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে। অফিসগুলোতে প্রাইভেসির চয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে স্বাস্থ্যবিধিকে; থাকতে পারে এয়ার পিউরিফিকেশন সিস্টেমও। মসজিদ, মন্দির ও শপিংমলগুলোতেও কড়াকড়ি হবে। ফেস মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, পরিচয় ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখা, দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানো অব্যাহত থাকবে। প্রবেশপথে বসানো হবে অত্যাধুনিক জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমে ফটকে সেলফ স্যানিটাইজার স্প্রেসহ সংক্রমণ নির্বীজকরণ করার এবং থার্মাল ক্যামেরা দিয়ে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকবে। ক্যামেরাগুলোর ৬ মিটারের মধ্যে একসাথে বেশ কয়েকজনের তাপমাত্রা মাপা, সংক্রমণ নিয়ে আগতদের গতি পর্যবেক্ষণ এবং সন্দেহভাজন রোগীদের শনাক্ত করার জন্য স্মার্ট স্ক্রিন ব্যবহার করবে।
পাঁচ. বদলে যাবে বিমান পরিবহন
ফ্লাইট চলাচল আবার স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে প্রথম দিকে যাত্রী কম থাকবে, তাই টিকিটের মূল্য হবে কম। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে যেমনটা ভাবা হচ্ছে যে মাঝের সিট ফাঁকা রেখে বিমানে চলাচল করবে যাত্রীরা, যদি তা হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়াতে বাধ্য হবে এয়ারলাইনসগুলো। বদলে যাবে বিমানের সিট। কিছু এয়ারলাইন্স সামাজিক দূরত্ব মানতে বিমানের মাঝখানের সিট সরিয়ে ফেলবে। কিছু বিমান মাঝের সিট না সরালেও প্রথমসারির প্রথম আসনটি একদিকে মুখ করানো থাকলে মাঝেরটি বিপরীত দিকে ঘুরাবে এবং তৃতীয়টি প্রথমটির মতো রাখবে। দ্বিতীয় সারির আসন তিনটি করবে প্রথমসারির বিপরীতমুখী। কিছু এয়ারলাইন্স প্রত্যেক আসনের মাঝে স্বচ্ছ পদার্থ দিয়ে তিন ধারে ব্যারিকেড দিবে। কিছু বিমানে গ্লাসসেফ তথা আগের আসন ঠিক রেখে প্রতিটি আসনকে সুরক্ষা কাচ ঘিরে দেবে। কাঁচের প্রাচীর দিয়ে পাশাপাশি বসা যাত্রীদের মধ্যে একটি নিরাপদ ব্যারিকেড তৈরিও করা হতে পারে।
ছয়. পাল্টে যাবে রেস্তোরাঁর ধরন
রেস্তোরাঁর ধরনই পাল্টে যাবে। পাল্টে যাবে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভিজ্ঞতা! রেস্তোরাঁগুলো আর আগের মতো এক জায়গাতে সীমাবন্ধ থাকবে না। বসার জায়গা হবে রেস্তোরাঁর মূল ভবনের বাইরে। কেবিনগুলো থাকবে খোলামেলা জায়গায়, কাচে ঘেরা। ওই কেবিনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনজন বসতে পারবেন। কাটাতে পারবেন আনন্দঘন সময়; খেতে পারবেন মজার মজার পছন্দের সব খাবার। তাছাড়া অনলাইন অর্ডার বাড়বে৷ বাড়িতে বসেই রেস্তোরাঁ থেকে খাবার এনে খাবেন গ্রাহক৷ অতিথি আপ্যায়ণের ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁর ওয়েটার বা অন্যান্য কর্মীদের ভূমিকা কমিয়ে আনা হবে৷
সাত. ক্রিকেটে বোলিংয়ের অভ্যাস পাল্টে যাবে
পেসাররা বল করার সময় বলটা ট্রাউজারে ঘষে নেন। একটু থুতুও মিশিয়ে নেন। বলটা সুইং করার এটি সহজ উপায় প্রচলিত। পরিচিত এই দৃশ্যে আপাতত বাঁধ সাধছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে বোলারদের এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আসবে। গায়ের ঘাম দিয়েই যতটা সম্ভব সুইং করার কাজ চালাবে।
আট. ফুটবলে থুতু ফেলা নিষিদ্ধ হবে
ফুটবলে কিছু বিষয় হয়তো আর আগের মতো থাকবে না। যেমন, ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়দের থুতু ফেলা। থুতু থেকে অগণিত ভাইরাস ছড়ায়। তা সত্ত্বেও এতদিন ফুটবলারদের থুতু ফেলায় কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। বিষয়টা কেউ সেভাবে গুরুত্বই দেয়নি। কিন্তু এবার খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মাঠে থুতু ফেলাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে। মাঠে থুতু ফেলার শাস্তি হিসেবে ফুটবলারদের হলুদ কার্ড দেখতে হতে পারে। এমনকি নিষিদ্ধও করা হতে পারে।
নয়. বাড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার হিসেবে আশা যুগিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমতায় ক্যারিয়ার। করোনা চিকিৎসায়ও এআই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। হাসপাতালগুলো রোগীদের ডায়াগনোসিস করতে কৃত্রিম প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। কন্ট্রাক ট্রেসিং অ্যাপ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছে রোবট৷ রোবট ভবিষ্যতে মানুষের স্থান দখল করে নিতে পারে – এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর প্রযুক্তিসেবা, ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেম, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ও স্মার্টফোন দিয়েছে হুয়াওয়ে। এ বছরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে চাকরি ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ড্রোন, রোবট, চালকবিহীন গাড়ির ব্যবহার দিনদিন বাড়তে থাকবে। রোবট ব্যবহার করে পুরোপুরি অটোমেটিক উৎপাদন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হবে, দোকানপাটে মানুষ কর্মীর ব্যবহার কমিয়ে ফেলা হবে৷ রোবট এবং মানুষ সম্মিলিতভাবে কারখানায় কাজ করবে৷ রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন, ছবি তোলা, পুলিশের নির্দেশ মেনে জীবাণুনাশক ছিটানো, বিকল্প স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ, সেলস ম্যানের দায়িত্ব পালন, রংমিস্ত্রির কাজ এবং মানুষকে সচেতন করায় ড্রোন ও রোবটের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
দশ. ঘৃণার ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকবে
করোনা ভাইরাস মহামারী চলাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ঘৃণা ও সহিংসতা কম-বেশি অব্যাহত থাকবে। অনলাইনে বিদেশী-বিরোধী মন্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে, রাস্তায় রাস্তায় অভিবাসন-বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। ইহুদি-বিরোধী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে, মুসলিম-বিদ্বেষী হামলা বাড়ছে। অভিবাসী ও শরণার্থীদের ভাইরাসের উৎস বলে চিহ্নিত করে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে ছড়ানো বর্ণবাদী, ঘৃণাত্মক ও অন্যান্য ক্ষতিকর কনটেন্টগুলো এই ঘৃণা আরো বাড়াবে।
এগার. বাড়িতেই অফিস করার হার বাড়বে
দোকানদারদের কাছ থেকে ‘বাজার’ চলে যাবে ‘ই-কমার্স’-এর দুনিয়ায়। ঘরে ‘কাজ’ এবং অনলাইনে ‘বিক্রি’ বাড়বে। ঘরে থেকে কাজের ক্ষেত্রে যাতায়াতের সময় বাঁচবে বলে মানুষ অধিক ঘণ্টা কাজ করবে এবং এতে অনেক কোম্পানিতেই লোকবল কম লাগবে। অনেক বিমান ভ্রমণের জায়গা করে নেবে স্কাইপে, টিমস ও ভিডিও কনফারেন্সিং। শিল্পপণ্যের বড় বড় প্রদর্শনী আগামী অনেক দিন অনলাইনেই হবে। কোম্পানিগুলো বাসা থেকে কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেয়াকে গুরুত্ব দিতে শুরু করবে।
বারো. বিশ্বনেতৃত্বে অদল-বদল ঘটবে
সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে বিশ্ব পরাশক্তি হয়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র করোনায় হেরেই বসেছে, কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পরাশক্তি নয়। লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যাও বেশি। বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অনদিকে চীনের করোনায় সামলে ওঠা, বিশ্বজুড়ে বন্ধুত্বপরায়ণ মনোভাব, দেশে দেশে সহযোগিতা, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামীর বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের হাতেই আসতে পারে। মোড়লিপনা নিয়ে চীন জোটের সাথে মার্কিন জোটের দ্বন্দ্ব বাড়বে। এতে যুদ্ধাশঙ্কাও বাড়বে।
তেরো. অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের অবসান ঘটবে
করোনা দেখিয়েছে, এত দিনকার বিশ্বায়ন টেকসই নয়। এই বিশ্বায়নের কেন্দ্রে ছিল বাণিজ্যিক স্বার্থ, রাজনৈতিক যৌথতা নয়। করোনা বিশ্বায়নের অন্ধকার অংশে আলো ফেলে দিয়েছে। ডলার-পাউন্ড পকেটে নিয়ে পণ্য না পাওয়ার অভিজ্ঞতা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক নাগরিকের জন্য জীবনে এই প্রথম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সীমান্ত বন্ধ এবং জরুরি অবস্থার মতো ঘটনা। বিশ্বজুড়ে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বের চেহারা হবে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত। অস্থিরতা বাড়বে। অভাব বাড়বে। বৈষম্য তীব্রতর হবে। সমাজের শ্রেণিদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হবে।
চৌদ্দ: রাষ্ট্রর নজরদারি বাড়বে
করোনা রাষ্ট্রীয় নজরদারি বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। কেবল বর্তমান ধাঁচের বায়োমেট্রিক কলাকৌশলই নয়, মানুষের হাত ধোয়া পর্যন্ত নজরে রাখার দিকে যাবে ‘রাষ্ট্র’। কোনো কোনো দেশে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা সব নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক হতে পারে ভবিষ্যতে। মানুষের নিরাপত্তা এবং ‘নিরাপদ সমাজ’ গড়ার কথা বলেই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাদের শারীরিক সংঘ এড়িয়ে অনলাইনভিত্তিক করার উদ্যোগ চলবে। ড্রোনের ব্যবহার বাড়বে।