বরগুনায় তরুণ লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই মহড়া দিচ্ছেন। এতে শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর শহরের অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে যানবাহন ও লোকজনের চলাচল কমে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে শহরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।
তরুণ লীগ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের নাথপট্টি লেক এলাকায় ছাত্রলীগ ও তরুণ লীগের দুই কর্মীর মধ্যে মারামারি হয়। এর জেরে ওই দিন রাতে ৭০-৮০ জন যুবক লাঠিসোঁটা, রামদা ও ছেনি নিয়ে শহরের বাজার রোডে জেলা তরুণ লীগের সভাপতি সুনাম দেবনাথ ও তরুণ লীগের কর্মী মঞ্জুরুল আলমের ব্যক্তিগত কার্যালয় তছনছ করেন। পরে ওই যুবকেরা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ঢুকে তরুণ লীগের কর্মী আরিফকে কুপিয়ে জখম করেন। প্রতিপক্ষের হামলায় জখম তরুণ লীগের কর্মী লিমন ও আরিফকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের বাজার রোডের দুই ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা মহড়া দেন। এতে আতঙ্কে তাঁরা সন্ধ্যার পরপরই দোকান বন্ধ করে চলে যান।
এ ব্যাপারে সুনাম দেবনাথ বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ের আসবাব ছাড়াও বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান, সহসভাপতি নাসিম, সদস্য সালাউদ্দীনসহ কয়েকজন ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন। তবে শহরে মহড়া প্রসঙ্গে সুনাম বলেন, ‘আমার কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। কারণ আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি।’
জুবায়ের আদনান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত এর কোনো প্রমাণ তাঁরা (সুনাম) দিতে পারবেন না। ওই ঘটনার সময় আমি শহরে ছিলাম না। আর যে দুটি ছেলে আহত হয়েছে তারা ছাত্রদল করে।’ জুবায়ের বলেন, ‘এখন আর কোনো উত্তেজনা নেই। তাঁরা (সুনাম দা) মনে করতে পারেন আমরা মহড়া দিচ্ছি, এটা ঠিক না।’
জেলা তরুণ লীগের সভাপতি সুনাম দেবনাথ বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে। আর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান বরগুনা জেলা পরিষদের প্রশাসক জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে।
এদিকে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন। সন্ধ্যার পর ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো দোকান খুলতে পরেন না, হাসপাতালে ঢুকে দুটি ছেলেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেরাও যদি অপরাধ করে তাদেরও আইনের আওতায় নিন।’
বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, দুই পক্ষকে বলা হয়েছে, কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো