অভাবের সংসারে আবার পড়াশোনা। বাবা অসুস্থ, মা বৃদ্ধ। ভাই-বোন মিলে পাঁচ পাঁচটি পেটের অন্ন যোগাতে হয় তার। এ জন্য শৈশব থেকেই মজুরের কাজ বেছে নিতে হয় উজ্জ্বলের।
রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলে দিনমজুরের কাজ। ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা। কিন্তু তাতেও দমে যাননি তিনি। দৃঢ় মনোবলে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। পরীক্ষার ফলাফলে উজ্জ্বলের উজ্জ্বল সাফল্য।
বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বদরখালী গ্রামের সেন্টু মিয়ার মেজ ছেলে উজ্জ্বল। অভাবের তাড়নায় বহু আগেই বিদ্যালয় ছেড়ে দিনমজুরের কাজে নেমে পড়েন বড়ভাই সোহেল (২৪)। ছোট বোন খুশবু আর বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়েই বেঁচে থাকার যুদ্ধ উজ্জ্বলের।
পেশাদার দিনমজুর উজ্জ্বলের বেশির ভাগ সময় কাটে বাড়ির পাশের সচ্ছল প্রতিবেশী দেলোয়ার বিশ্বাসের বাড়িতেই। সে বাড়ির ক্ষেতখামার আর পুকুর থেকে মাটি কেটে উঠান ভরাট কিংবা পানের বরজের পরিচর্যার কাজ তার।
বাজার সদাই ফাইফরমাসও খাটতে হয় তাকে। এরই মধ্যে রাত জেগে পড়াশোনা উজ্জ্বলের। এত কষ্টের মধ্যে এ বছর বরগুনার গৌরীচন্না সুলতানা সালেহ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে কমপিউটার ট্রেডে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
গৌরীচন্না বাজারের অনেকেই জানান, অভারের সংসারে ছোটকাল থেকেই উজ্জ্বল এ বাড়ি ও বাড়ি দিনমজুরের কাজ করে অসুস্থ পিতার হাল ধরে রেখেছে। মাঝে মাঝে সে স্কুলে যেত কিন্তু সে যে এত ভালো ছাত্র তা তারা বুঝতে পারেননি।
উজ্জ্বলের বাবা সেন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে মূত্রনালীর সমস্যায় ভুগছেন। সেন্টু মিয়া বলেন, গরিব পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে কিন্তু আমাগো উজ্জ্বল পেটের দায়ে বছরজুড়েই কাজ করেছে। ফাঁকে ফাঁকে রাত জেগে সে পড়াশোনা করেছে।
উজ্জ্বল জানান, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার শখ ছিল তার। কিন্তু ছোট বোন খুশবুর পড়াশোনা আর অসুস্থ বাবা-মায়ের সংসারের খরচ না যোগালে তার চলবে কি করে। কিন্তু সে শখ আর পূরণ হবে না। নিজের পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে সে ছোট বোনের পড়াশোনা আর বাবা-মায়ের সেবা করে যাব।
গৌরিচন্না সুলতানা সালেহ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম বলেন, উজ্জ্বল এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কম্পিউটার ট্রেডে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। অভাবের তাড়নায় সারাবছরই তাকে কাজ করতে হয়েছে। একটি ছেলের রোজগারে চলে পুরো সংসার। তার বাবা-মা ও ছোট বোনের খরচ জোগাতে তার পড়াশোনা অনেকটাই অনিশ্চিত।