প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পাথরঘাটার পর্যটন কেন্দ্র বিভাগঃ দর্শনীয় স্থান, পাথরঘাটা সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯; ৯:৫০ অপরাহ্ণ 2,254 বার দেখা হয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের চলতি বছরের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভ প্রতিবেদনে ভ্রমণ ও পর্যটনে সেরা দেশগুলোর তালিকায় পাঁচ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২০-এ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানের মধ্যে অন্যতম বরগুনা জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা বরগুনাকে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে পরম যত্নে। এ জেলারই উপজেলা পাথরঘাটা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র হরিণঘাটা ও বিহঙ্গদ্বীপসহ একাধিক পর্যটন স্থান থাকায় পাথরঘাটা উপজেলা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে হতে পারে পছন্দের। বঙ্গোপসাগর ও বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন ঘেঁষা এই অঞ্চলটি বিপুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। যেটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে শুধু প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের। যা পেলে পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা, লালদিয়ার চর, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, বিহঙ্গদ্বীপ- এ স্থানগুলো ঘিরে গড়ে উঠতে পারে দেশের পর্যটনশিল্পের বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।হরিণঘাটাসুন্দরবনের কোলঘেঁষা উপকূলের বহতা দুই নদ-নদী এসে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। এই মোহনাজুড়ে বিশাল চর আর বনের সুবিস্তৃত সবুজের সতেজতা। সাড়ে ছয় হাজার একরজুড়ে বিস্তৃত নয়নাভিরাম বনের ভেতর নিসর্গের মুগ্ধতা। আরো পড়ুন : পাথরঘাটায় মাদকবিরোধী সমাবেশহরিণঘাটা থেকে লালদিয়ার চরে… ২৬ প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে ঠাসা হরিণঘাটার এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সাগর মোহনার চরজুড়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বন। সেই সঙ্গে সৃজিত বনের সম্প্রসারণে বনের পরিধি বাড়ছে। হিংস্র প্রাণী না থাকলেও আছে হরিণ, বানর, শূকর, গুইসাপ, নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ ২৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। আরও আছে ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির পাখি আর অগণিত প্রজাপতি, ফড়িংসহ নানা পতঙ্গকুল। এখানে রয়েছে গেওয়া, কেওড়া, পশুর, সৃজিত, সুন্দরী, গোলগাছ, ঝাউবনসহ নানা প্রজাতির গাছ। বনের ভেতরে এঁকেবেঁকে চলা ছোট-বড় মিলিয়ে ১০-১২টি খাল প্রবহমান। বনের দক্ষিণ সীমানায় সাগর মোহনার চরে রয়েছে মৌসুমি শুঁটকি পল্লী। সাগর-সান্নিধ্যে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার আদর্শ জায়গাও এটি। বিহঙ্গদ্বীপউপরে নীল আকাশ, নিচে চারদিকে জলরাশি, মাঝখানে প্রকৃতি সাজিয়েছে অপরূপে। এমন একটি দ্বীপের নামই ‘বিহঙ্গদ্বীপ’। সুন্দরবন ঘেষা বলেশ্বর নদের বুক চিড়ে অবস্থিত দ্বীপটির চারপাশে অথৈ জলরাশি আর সবুজ বেস্টনি দিয়ে ঘেরা। এর একদিকে রয়েছে ধু-ধু বালুচর, অন্যদিকে রয়েছে শিতল বালু, যেখানে প্রকৃতি খেলে নিজ রূপে। ঢেউয়ের গর্জন, সূর্যাস্ত, পাখির কিচির-মিচির আর হরিণের ছোটাছুটি তো আছেই। সেই সঙ্গে কাঁকড়া, শামুকের অবাধ ছোটাছুটি আর বিভিন্ন পাখির কলকাকলী মুহূর্তেই মুগ্ধ করে দেয় যে কাউকে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাগরের মাঝে বড় কোনো সবুজ পাহাড়। আরো পড়ুন : 'ধরি ইলিশ খাই পাঙ্গাস'লালদিয়া বন ও সি-বিচপাথরঘাটার দক্ষিণেই লালদিয়ার বন। এই বনের পূর্বে বিষখালী নদী, পশ্চিমে বলেশ্বর নদীর মোহনা। এই দুই নদীর মোহনা ঘিরে রেখেছে লালদিয়ার বনকে। এখানে বিভিন্ন রকমের পাখি বসবাস করে এবং রাতে এই বনে দূর-দূরান্ত থেকেও পাখিরা এসে আশ্রয় নেয়। এই বনে কিছু কিছু শীতকালীন অতিথি পাখিও দেখা যায়। এ বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তেই সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আদলে হচ্ছে এ সৈকত। পাথরঘাটা উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা গ্রামে বিষখালী নদীর তীরে অবস্থান লালদিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেখানকার বিষখালী নদীর অদূরে বঙ্গোপসাগরের পাড়েই হচ্ছে লালদিয়া সমুদ্রসৈকত। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। এক পাশে সমুদ্র, অন্য পাশে বন, মাঝে সৈকত, এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিতে বিরল। আরো পড়ুন : অল্প সময়ে জনপ্রিয় সোনাকাটা ইকোপার্ক, সংস্কারের অভাবে ভোগান্তিপর্যটন বিকাশে উদ্যোগএখানকার স্থানগুলোকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র করার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোনার চরের ২০ হাজার ২৬ হেক্টর বিস্তৃত বনভূমিসহ ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতজুড়ে গড়ে তোলা হবে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র। এজন্য ‘প্রিপারেশন অব পায়রা-কুয়াকাটা রিজিওনাল প্ল্যান’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। মূলত কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার সমন্বয়ে পর্যটন জোন স্থাপন করা হবে। এর লক্ষ্যে চলতি সময় থেকে শুরু করে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত চলবে সার্ভের কাজ। বনবিভাগের পটুয়াখালী উপকূলীয় বনকেন্দ্রের ডিএফও মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়নের জন্য এক কোটি টাকার ‘ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর নদের ওপর বিহঙ্গদ্বীপ নিয়েও আমরা কাজ করছি। বাংলানিউজ শেয়ার করতে আইকনে ক্লিক করুনTweetWhatsAppPrint ২০১৯-০৯-২৮ Barguna Online