বরগুনা অনলাইন : পাথরঘাটা থেকে মঠবাড়িয়া এবং পাথরঘাটা থেকে বামনা পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগে কয়েক হাজার মানুষ। পাথরঘাটার সঙ্গে উত্তর অঞ্চলের জলপথে ও স্থলপথে উভয় ক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম থাকলেও দূরত্ব ও সময়ের কথা বিবেচনা করে সড়ক পথকেই প্রাধান্য দিয়েছেন প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকাটি বঙ্গোপসাগরের উত্তরে হওয়ার কারণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর(বাংলাদেশ ফিশিং ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) বি.এফ.ডি.সি পাথরঘাটায় অবস্থিত। প্রতিদিন সকাল ৭টায় সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ করে জেলেরা ঘাটে এসে মৎস্য বাজারে মাছের ডাক হাকার পরে ব্যবসায়ী,পাইকারগন মাছ ক্রয় করে প্যাকেটজাত করে পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠিয়ে দেন।পন্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলে সড়ক পথের গুরুত্ব অনেক বেশী। রাজধানী থেকে পাথরঘাটার সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগের অন্যতম বাহন হচ্ছে মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা, পাথরঘাটা,বামনা,কাঠালিয়া-ভান্ডারিয়া হয়ে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন এলাকার মহাসড়ক। বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে আবার রাজধানীতে। দুটি দিক থেকে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করা সম্ভব।
এ দুটি সড়কের পাথরঘাটা অংশের বিভিন্নস্থানে বড় বড় গর্তের কারণে যান চলাচল যেমন বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চালক, যাত্রী ও সাধারন পথচারীরা।এক কথায় পাথরঘাটার মানুষ চরম দুর্ভোগে। পৌনে তিনলক্ষ মানুষের বসবাস থাকলেও চীর কালই এ এলাকাটি অবহেলিত। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি-কাদায় একাকার এবং শুকনো মৌসুমে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যাওয়া সড়কে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই থাকছে। গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টির কারনে পাথরঘাটা-কাকচিড়া ও পাথরঘাটা-মঠবাড়ীয়া সড়কের কালমেঘা ইউনিয়নের ছোট পাথরঘাটা সড়কে এবং পাথরঘাটা-মঠবাড়ীয়া অংশের সকল স্থানেই বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া সড়কের পাথরঘাটা অংশ এবং পাথরঘাটা নতুন বাজার ব্রীজ এলাকা থেকে পাথরঘাটা-কাকচিড়া-আমুয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। ভারি বর্ষা হলে পানি জমলে দুর থেকে মনে হয় সামনে বড়খাল।সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়তই বিকল হচ্ছে যানবাহন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে দ্বিগুন থেকে তিনগুন। প্রতিবছর এই এলাকাটির দুই প্রান্তের সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সরকার কর্তৃক পুনঃ মেরামত করলেও প্রতিনিয়ত নতুন খানাখন্দ তৈরী হয়।অসুস্থ রোগী,মুমুর্ষ রোগী নিয়ে বরিশাল বা খুলনা মেডিকেলে পৌছাতে চরম দুর্ভোগে পরেন রোগীর স্বজনগন।
পাথরঘাটা কলেজের শিক্ষার্থী আয়শা সিদ্দিকা,ছরোয়ার হোসেন,সোহেল মিয়া, পারভিন আক্তার বলেন, আমারা শিক্ষার্থীরা সব সময় এই দুটি সড়ক দিয়েই বাড়ি থেকে কলেজে যাতায়াত করি, কখনোই দেখলাম না যে এই সড়কদুটিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভাল করে কাজ করেছে। এখন কলেজে যেতে খুব ভয় পাই কারন বাড়ি থেকে বের হলেই রাস্তার যে অবস্থা তাতে কখন দুর্ঘটনাঘটে কে জানে। অনেক সময় কলেজে যাবার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা কাপড় নিয়ে যেতে হয়। কাদায় কাপড় নষ্ট হয়ে গেলে সাথে থাকা কাপড় পরি। আবার কখনো কখনো কলেজে যেতে পারিনা এর কারন কখন দুর্ঘটনায় পরে বড় ধরনের বিপদ হবে এই আশংকায়।
মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা নাজমুল আহসান,আব্দুল জলিল, জয়নাল আবেদীন ও সোহরাবসহ বেশ কয়েকজন বলেন, প্রতিবছর বৃষ্টির দিনে কাদায় চলাচল করাতো যায়ই না,বিভিন্ন খানাখন্দে গাড়ি আটকে পড়ে।সময় মতো কলেজ করতে পারিনা। ছোট ছোট শিশুরা কিভাবে স্কুলে যায় ভাবতেও কষ্ট হয়। কিছুদিন পরপর নামেমাত্র ইট ও বালি দিয়ে মহাসড়কের গর্ত মেরামত করা হলেও সামান্য বৃষ্টিতে সেগুলো উঠে গিয়ে পুরনো খানাখন্দ দৃশ্যমান হয়। মাঝে মধ্যে কাজ করতে দেখা গেলেও আবার একই অবস্থা দাঁড়ায়।
পাথরঘাটা-কাকচিড়া সড়কের মাহিন্দ্রা ড্রাইভার জাফোর মিয়া জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই সড়কের ভাঙ্গা রাস্তা ফেলে রাখায় অধিকাংশ স্থানের মূল সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে এখন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। কবে নাগাদ পুরো কাজ সম্পন্ন হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির সাংবাদিকদের বলেন, খুব তাড়াতাড়ি খানাখন্দে খোয়া ফেলানোর জন্য কাজ শুরু হবে। পুনঃমেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
এ বিষয়ে বরগুনা সড়ক ও জনপদের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, সড়ক ও জনপদের সাথে ঠিকাদারের যে চুক্তি তাতে তারা ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ করবে। সড়কের বর্তমান যে অবস্থা তা আগামী ২ মাসের মধ্যে কাজ করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।
সূত্র : জনকণ্ঠ