গোলাম কিবরিয়া, বার্তা সম্পাদক : পেশায় সিকিউরিটি সুপারভাইজার হলেও কখনো পুলিশ অফিসার, কখনো আর্মি অফিসার, আবার কখনো নেভি অফিসার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। আর এসব ভুয়া পরিচয় দিয়ে গত ৯ বছরে ৯টি বিয়ে করেছেন। আরও ৪ প্রেমিকাকে দিয়েছেন বিয়ের প্রতিশ্রুতি।
শুধু বিয়েই নয়। চাকরি দেয়ার নাম করেও শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এসব করে আর পার পেলেন না, অবশেষে শুক্রবার দিবাগত রাতে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সোলায়মানকে (২৯) গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ। বিয়ে পাগল সোলায়মানের বাড়ি বরগুনা। সেখানেও তার বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, ১৭ বছর বয়সে জীবিকার সন্ধানে বরগুনা থেকে চট্টগ্রামে আসেন সোলায়মান। বন্দর নগরীর এক গার্মেন্টসে সিকিউরিটি সুপারভাইজারের চাকরি নেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ফোনে অল্প বয়সী মেয়েদের পটিয়ে প্রতারণার জালে ফেলে বিয়ে করার এক অভিনব কৌশল রপ্ত করেন তিনি। টার্গেট করেন গার্মেন্টসের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেয়েদেরকে। শুধু তাই নয়, বিয়ে করার পরে স্ত্রীর ভাই-বোনদেরকে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। নিজের স্ত্রীকে দিয়ে এনজিও থেকে ঋণ তুলে ওই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন অন্যত্র। সেখানে গিয়ে বেছে নিয়েছেন আরেকজনকে।
সোলায়মানের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতারণার বেশ কিছু তথ্য আগেই পেয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তবে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি এতোদিন।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন অফিস বা বিভিন্ন সেনা সদস্যদের পোশাক পরা ছবিতে নিজের মুখ লাগিয়ে সেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতো সোলায়মান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নানা পরিচয়ে গত ৯ বছরে ৯ জনকে বিয়ে করার পাশাপাশি আরও কয়েকজনকে বিয়ের আশ্বাস দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন সোলায়মান। শুধু বিয়ে করার মধ্যে তার প্রতারণা সীমাবদ্ধ ছিল না। বিয়ে করা স্ত্রীদের দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন ও চাকরি দেয়ার নামে শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ডিবির উপপরিদর্শক মনির হোসেন বলেন, ‘সবাই জানত সে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। আর এ বিশ্বাসেই তাকে টাকা দিয়েছে সবাই। এভাবেই সে টাকা হাতিয়ে নিত। তার ৮ম স্ত্রী রাহেলার কাছ থেকে তার ভাই ও বোনকে চাকরি দেয়ার নাম করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা এবং তার নামে এনজিও থেকে ঋণ তুলে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সবশেষ নবম স্ত্রী রহিমার কাছ থেকে যৌতুক নিয়েছেন দুই লাখ টাকা।
এভাবে গত ৯ বছরে ৯টি বিয়ে করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুনিপুণ কারিগর এ সোলায়মান, যোগ করেন তিনি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বিয়ে পাগলা সোলায়মানের বিরুদ্ধে উঠতি বয়সী মেয়েদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ হাতে আসলে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দিবাগত রাতে গোয়েন্দা (বন্দর) পুলিশ ও পাহাড়তলী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে পাহাড়তলী থানা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার ৯ম স্ত্রীকেও উদ্ধার করা হয়।
এর আগে রাঙ্গামাটির ১৫ বছর বয়সী সোলায়মানের ৯ম স্ত্রী রহিমা আক্তারের মা বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা করেন।