পাথরঘাটা-পিরোজপুর সড়কের বেহালদশা : ভোগান্তিতে যাত্রীরা

`এ রাস্তায় ট্রিপ দিলে পরের দিন গা ব্যাথা করে।` এক যুগ ধরে সড়কটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার পিচ উঠে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশস্ততা কম ও খানাখন্দের কারণে সড়কটিতে যান চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পাথরঘাটা-পিরোজপুর সড়কের বেহালদশার কথা এভাবেই বলছিলেন ঢাকা থেকে পাথরঘাটাগামী পরিবহনের বাস চালক আসাদুজ্জামান।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক যুগের বেশি সময় ধরে পিরোজপুরের চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সড়কটির বেহাল অবস্থা। সড়কটির মঠবাড়িয়া উপজেলার গুদিঘাটা থেকে ঝাউতলা বাজার পর্যন্ত ১০ কিলেমিটারে পিচ ও খোয়া উঠে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যা পিরোজপুর অংশের ২৯ কিলোমিটার ও বরগুনার পাথরঘাটা অংশে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা গত এক যুগে কয়েক বার সংস্কার হলেও সড়কের বেহাল অবস্থার উন্নতি হয়নি। সংস্কারের পর কয়েক মাস সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী থাকার পর আবার খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এ কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সড়কটি যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

পাথরঘাটা থেকে পিরোজপুরগামী পরিবহনের বাস চালক বেলাল বলেন, এ সড়কটি দিয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) মাছবাহী ট্রাক, স্থানীয় ও দূরপাল­ার বাসসহ প্রতিদিন কয়েক `শ যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির প্রশস্ততা কম হওয়ায় (১২ফুট) একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে সড়কের ঢালে নামতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে যাওয়ায় গাড়ির পাতি, বেয়ারিংসহ যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। এ কারণে গাড়ি মেরামতের জন্য বাস মালিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চরখালী থেকে মাদার্শী পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ডন রেবিস জেবী ও মাসুদ খান নামে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া গত এপ্রিলে ‘শাহজাহান আলী কনস্ট্রাকশন’ নামের আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গুদিঘাটা থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত নয় কিলোমিটার ৭০০ মিটার সড়কের সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, মঠবাড়িয়া থেকে চরখালী পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়কটির গত দুই বছর ধরে বেহাল অবস্থা। সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। চরখালী থেকে মার্দাশী পর্যন্ত কয়েক মাস আগে রাস্তায় ইটের খোয়া ফেলে রাখেন ঠিকাদার। এরপর আর কাজ হয়নি। আর গুদিঘাটা থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত কাজ এখনো শুরু হয়নি। বর্ষার আগে সংস্কার কাজ শেষ করা না হলে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। শাহজাহান আলী কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চরখালী থেকে মাদার্শী পর্যন্ত সড়কে ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে বাস ও মোটরসাইকেল চলার সময় প্রচুর ধুলো ওড়ে। এতে মোটরসাইকেলে যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ঝাউতলা থেকে গুদিঘাটা পর্যন্ত সড়কে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঝাউতলা থেকে গুলিসাখালী ২৫ কিলেমিটার পর্যন্ত বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশে (শোল্ডার) মাটি নেই। সড়কের সিঅ্যান্ডবি, দক্ষিণ গুলিসাখালী, বহেরাতলা ও গুদিঘাটা সেতুর অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সেতুর ভেঙে যাওয়া পাটাতনের প্লেটগুলো জোড়াতালি দেওয়া রয়েছে।

পিরোজপুর সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, মঠবাড়িয়ার সিঅ্যান্ডবি থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত ২৮ কিলেমিটার সড়কের প্রশস্ততা ১২ ফুট হওয়ায় একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গেলে সড়কের ঢালে নামতে হয়। এর ফলে সড়কের দুই পাশ ভেঙে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। এছাড়া দুটি গাড়ি পাশ কাটাতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

পিরোজপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি বলেন, সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত ও আঞ্চলিক মহাসড়ক করার একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেননি। সড়কটির প্রশস্ততা বাড়ানো এবং আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করা না গেলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সূত্র : জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *