বরগুনায় এক পরিবারের ৪ সদস্য করোনা আক্রান্ত

বরগুনা অনলাইন

বরগুনা অনলাইন : বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন বাবা অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুসহ মা চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় থেকে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কখনো-বা সরাসরি সে বাসায় উপস্থিত হয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।

জীবনের এমন ঘোর বিপদে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে আক্রান্ত দুই শিশু। ভীত-সন্ত্রস্ত বাবা-মা-ও। শনিবার সকালে বরগুনা পৌরসভার একটি এলাকায় করোনা আক্রান্ত ওই পরিবারের মায়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে তিনি বলেন, তারা মোটামুটি ভালো আছেন। তবে তাঁর ছোট ছোট দুই ছেলে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তাঁর এক ছেলের বয়স আট বছর আরেক ছেলের বয়স ১৩ বছর। ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

খাবার কিভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার আত্মীয়-স্বজনরা দরজার সামনে এসে খাবার রেখে ফোনে জানিয়ে দেন। তারপর দরজা খুলে তিনি খাবার নিয়ে নেন। ছেলেরা বেশির ভাগ সময় কী করছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাঝে মাঝে তাদের শরীরে একটু জ্বর দেখা যায়। তারপরে একটু সুস্থ বোধ করলে তারা ক্যারম খেলে। অথবা টিভি দেখে।

হাসপাতাল থেকে কী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। জ্বর হলে জ্বরের জন্য ওষুধ দিচ্ছেন। এ ছাড়াও বেশ কিছু ওষুধ তারা লিখে দিয়েছেন সেগুলো আমরা নিয়মিত খাচ্ছি। সাথে গরম পানিও খাচ্ছি।
দুই শিশুসহ হাসপাতালে কেন ভর্তি হলেন না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, হাসপাতালে গেলে সবাইকে পৃথক পৃথক কক্ষে থাকতে হবে। আমার বাচ্চারা যেহেতু ছোট সেহেতু তারা পৃথক কক্ষে থাকতে পারবে না। তাই আমরা হাসপাতালে যাইনি। বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি।

আক্রান্ত দুই শিশুর সাথেও মোবাইল ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় ওই দুই শিশুকে তাদের বাবার সুস্থ হয়ে যাওয়ার খবর এবং করোনারোগীদের অধিকাংশই ভালো হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে সাহস দেওয়া হয়। তারপরেও অনেকটাই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হয়েছে ওই দুই শিশুকে। তারা সবার কাছে তাঁদের রোগমুক্তির জন্য দোয়া চেয়েছেন এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট ইনচার্জ শাহনাজ পারভিন বলেন, ওই পরিবারের গৃহকর্তা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি অনেকটাই সুস্থের দিকে। দুইবারই তাঁর ফলোআপ টেস্টে নেগেটিভ এসেছে। আশা করি দু-একদিনে তিনি ছাড়পত্র পাবেন। তবে ওই পরিবারের দুই শিশুসহ মায়ের ফলোআপ টেস্ট এখনও করা হয়নি।

জানা যায়, আক্রান্ত ওই পরিবারের গৃহকর্তা পেশায় একজন চাকরিজীবী এবং তাঁর স্ত্রী একজন স্বাস্থ্য সহকারী। ওই গৃহবধূ গত ১৮ এপ্রিল অফিস করে বাসায় যান। ওই দিনই তার স্বামী কিছুটা কাশি এবং জ্বর জ্বর অনুভব করেন। এরপর তার নমুনা টেস্টের জন্য পাঠানো হলে তার নমুনা পজিটিভ আসে। এরপর দুই শিশুসহ মায়ের নমুনা টেস্টের জন্য পাঠানো হলে তাদের সবার রেজাল্টও পজিটিভ আসে।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং করোনা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একমাত্র চিকিৎসক ডা. কামরুল আজাদ বলেন, বাইরের রোগী হাসপাতালে এনে ভর্তি করানোর দায়িত্বটা আসলে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। তারা কী কারণে হাসপাতালে আসেনি তা আমার জানা নেই। তবে আমি তাঁদের খোঁজখবর নিয়েছি। তাঁরা বর্তমানে ভালো আছেন।

মানবজমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *