গোলাম কিবরিয়া, বরগুনা :বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির যুক্তিতর্ক। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জবাব দিবেন। এরপর বিচারক রায়ের দিন ধার্য করেবন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে সর্বশেষ আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এ সময় জামিনে থাকা মিন্নি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ঢাকা থেকে আগত আইনজীবী ফারুক আহম্মদ। দীর্ঘ চার ঘন্টার যুক্তিতর্কে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য, মিন্নির স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি ও বিভিন্ন আইন নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। যুক্তিতর্ক শেষে ওই আইনজীবী বলেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ছিল এই মামলার প্রধান সাক্ষী। পুলিশ অহেতুক তাকে আসামি করেছে।
তিনি বলেন, মিন্নিকে ১৬ জুলাই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বাড়ি থেকে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসেন। পরে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মিন্নিকে ১৭ জুলাই ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় পুলিশ। সেই সময় মিন্নি একজন আইনজীবী পর্যন্ত দিতে পারেনি। পাঁচদিন রিমান্ড শেষে চাপ সৃষ্টি করে মিন্নিকে দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পক্ষ নিহত নয়ন বন্ডের স্ত্রী মিন্নি দাবী করে কাজি আনিসুর রহমানকে দিয়ে যে সাক্ষ্য আদালতে দিয়েছেন। তা সঠিক নয়। ওই কাবিনে কাটা ছেড়া ছিল। একটি বাচ্চা মেয়ে (মিন্নি) বিয়ের কী বুঝবে। এ ছাড়া নয়ন বন্ডের বাসা এবং কাজির বাসা এক ওয়ার্ডে নয়। এটি বির্তকিত বিয়ে। তিনি আরও বলেন, ৭৬ জন সাক্ষ্যর মধ্য স্থানীয় দুইজন এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাড়া মিন্নির বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।
তিনি বলেন, মিন্নি প্রথমে প্রধান সাক্ষী ছিল। মামলার বাদী দুলাল শরীফ ৬ জুলাই বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে মিন্নিকে আসামি করার জন্য একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনটি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অগ্রগামী করেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়ে বাদীর আবেদনটি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে প্রদর্শন করেননি। মিন্নি রিফাত শরীফকে রক্তাক্ত অবস্থায় রিক্সায় করে বরগুনা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। সেই ভিডিওটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে জব্দ করেননি। মিন্নির বিরুদ্ধে যে সব সাক্ষ্য হয়েছে তাতে মিন্নি খালাস পেতে পারে।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, পিপি ভবন চন্দ্র হাওলাদার, মোস্তাফিজুর রহমান ও এম. মজিবুল হক কিসলু।
এ বিষয়ে পিপি ভূবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, এ পর্যন্ত আদালতে ৭৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মিন্নিসহ অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা দোষ স্বীকার করে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষ আশা করে সকল ১০ জন আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আমরা আগামী ১৬ তারিখ আসামী পক্ষের যুক্তি খন্ডন করবো। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের রুলিং আদালতে দাখিল করবো। এরপর আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য্য করবেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জন আসামির বিচার কার্য শেষ হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ জুন রিফাত শরীফকে নয়ন বন্ড ও তার বন্ধুরা বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সড়কে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই মাস ছয়দিন তদন্ত করে ২৪ জনকে আসামি করে দুটি ভাগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দেয়। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন কিশোর আসামি। মামলায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও শিশু আসামিদের মধ্যে ৮ জন জামিনে রয়েছেন।