সিডরে ভেসে বেঁচে যাওয়া রিয়া এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী

নাহিন হক রিয়া

সিডরে ভেসে বেঁচে যাওয়া সেই নাহিন হক রিয়া এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সিডরের সময় তার বয়স ছিল চার বছর। রিয়া বরগুনার মেয়ে।

স্মরণকালের সিডর দিবস ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি শুরু হয়। বাতাসের তীব্রতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। মাইকিং চলছে- ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। জনসাধারণকে নিকটতম আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করছে প্রশাসন। রাত ঘনিয়ে আসছে। বাতাসের তীব্রতাও বাড়তে থাকে।

রাত অনুমান ১০টা। বিদ্যুৎ নেই। ঝড়ের তীব্রতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। চারিদিক কান্না ও চিৎকারে শব্দ কানে ভেসে আসে। বরগুনা পৌরসভার চরকলোনী একতলা ভবনে থাকে সিডর কন্যা রিয়ার বাবা। রাত যত গভীর হতে থাকে বাতাসের গতিবেগ ততো বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে নদ নদীতে পানি বাড়তে থাকে। নিমিষে পানির গতিবেগ বেড়ে রাস্তা উপচে বাসা বাড়ীতে ঢুকতে শুরু করে।

রাত সাড়ে ১০ টায় রিয়ার বাবার বাসায় পানি প্রবেশ করে। কিন্তু রিয়ার পরিবার টের পায়নি। সবাই প্রতিবেশী আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লার উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। রিয়াদের পরিবারের কাউকে না দেখে প্রতিবেশী মাহমুদুল আজাদ রিপন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রিয়ার বাবার বাসায় সাঁতরে এসে দরজায় নক করে। রিয়ার বাবা দরজা খুলতে গিয়ে দেখে তার বাসায় হাঁটু পর্যন্ত পানি। দরজা খোলার সাথে সাথে বাসার মধ্য পানি ঢুকে যায়।

পানির তীব্র স্রোতে চার বছরের রিয়া ভেসে যাচ্ছিল। বাইরে প্রচণ্ড বাতাস। বৃষ্টি ঝরছে। পানির তীব্র স্রোত। অন্ধকার রাত। গাছপালা বাতাসে উপড়ে পড়ছে। রিয়ার পরিবার কান্নাকাটি শুরু করে। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভেসে যাওয়া নাহিদ হক রিয়াকে বাঁচানোর জন্য পানিতে ঝাঁপ দিয়ে রিপন কোলে তুলে নেয় রিয়াকে। পানিতে ভাসতে ভাসতে রিয়াকে নিয়ে রিপন পাশের মন্টু মোল্লার ভবনে নিয়ে যায়।

রিয়ার পরিবার রিয়াকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। রিয়াকে তার পরিবার না পেয়ে অন্য সন্তান রাকিবকে নিয়ে বুক সমান পানিতে সাঁতার কেটে মন্টু মোল্লার ভবনে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানে রিয়াকে পাওয়া যায়। অসংখ্য মানুষ রিয়াকে দেখে যে যেরকম পারে শুকনো কাপড় এনে দেয়। সারা রাত রিয়ার পরিবার মন্টু মোল্লার ভবনে রিয়াকে নিয়ে রাত কাটায়।

রিয়ার বাবা যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার এম মজিবুল হক কিসলু। তিনি থাকেন বরগুনা জেলায়। রিয়ার বাবা বলেন, সেদিনের কথা আমি সারা জীবনে ভুলতে পারব না। আমার বাসার সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও আমার সন্তান রিয়াকে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গেছি। আমাদের রিয়া এখন বড় হয়েছে। রাজউকে পড়াশোনা শেষ করে এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করে।

সূত্র: যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *