বরগুনার আলোচিত শিশু রবিউল হত্যা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন শিশুটির বাবা দুলাল মৃধা। একই আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের একমাত্র আসামি মিরাজের পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী মিজানুর রহমান।
আমতলী উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাস নারাজি ও জামিন আবেদন গ্রহণ করে কাল বৃহস্পতিবার দুটি আবেদন শুনানির দিন ধার্য করেন। রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা বাদী হয়ে মিরাজ, তাঁর বাবা, মা ও ছোট ভাইকে আসামি করে আমতলীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে ২০ আগস্ট নতুন করে একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। গতকাল সেই মামলাটিরও শুনানির তারিখ ধার্য ছিল।
গত রোববার তদন্ত কর্মকর্তা ও তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আখতার তদন্ত শেষে আমতলী আদালতে মিরাজকে একমাত্র আসামি করে ৩০২ ও ২০১ ধারায় অভিযোগপত্র জমা দেন।
তবে রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা শুরু থেকেই তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে আসামিদের পক্ষপাতিত্ব ও মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ করছিলেন। তাঁর দাবি, ঘটনার পর পুলিশের কাছে তিনি এই হত্যায় জড়িত বলে কয়েকজনের নাম বললেও পুলিশ কেবল মিরাজকে আসামি করে এজাহার লেখে। একই সঙ্গে অন্য আসামিদের রক্ষায় পুলিশ তড়িঘড়ি করে মিরাজকে দিয়ে আদালতে শেখানো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায়।
গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে দুলাল মৃধা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শুরুতেই তালতলী থানার ওসিকে বলেছি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিরাজ একা জড়িত নয়। এতে তার বাবা, মা ও ভাই জড়িত। কিন্তু ওসি সাহেব আমার কোনো কথাই শোনেননি। এজাহারে আমার ছেলেকে মানসিক রোগী বানানোর অপচেষ্টা হয়েছে। আমি সন্দিহান, পুলিশের এই তদন্তে আমি ন্যায়বিচার পাব না। এ জন্য আমি মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য নারাজি আবেদন করেছি।’
তবে ওসি বাবুল আখতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এই মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে মিরাজ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট আমখোলা গ্রামের দুলাল মৃধার ছেলে রবিউল (১১) ৩ আগস্ট রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। পরদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ফরাজীর মাছের ঘের থেকে রবিউলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ আগস্ট স্থানীয় দেলোয়ার খানের ছেলে মিরাজ খানকে (২৫) তালতলী থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৬ আগস্ট মিরাজ আমতলীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মিরাজ বলেন, তাঁর চাঁই থেকে মাছ চুরি করার সন্দেহে তিনি শিশু রবিউলকে লাঠি ও টর্চলাইট দিয়ে মাথায়, মুখে ও চোখে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে তার লাশ পাশের লখনার খালে ফেলে দেন।
১২ আগস্ট পুলিশ আমতলী উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে আসামি মিরাজকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে মিরাজকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।