মো. জামাল মীর : শৈশবেই বাবাকে হারান মো. হাসান মিয়া। নিজের পড়াশুনার খরচ যোগাতে রাতভর কাজ করেন টোলপ্লাজায়। তার উপার্জনেই টিকে আছে হাসানের পুরো পরিবার।
বরগুনা পৌরসভার টাউনহল সংলগ্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে টোল আদায়ের কাজ করেন হাসান মিয়া। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা যানবাহনগুলো থেকে আদায় করা টোলে শতকরা ২০ শতাংশ পান তিনি। আর সেই টাকাতেই চলে বরগুনা সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসানের লেখাপড়া। তার ঘাড়ে আছে মা ও বোনের দায়িত্বও।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে বরগুনা শহরের টাউনহল মোড়ে গাড়ির টোল ওঠানোর সময় এ প্রতিবেদককে সঙ্গে কথা হয় অদম্য সাহসী এই হাসানের।
দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় মারা গেছেন তার বাবা। বড় আরও দুই ভাই থাকলেও তাদের খোঁজ নেন না। কাজ করে যে টাকা উপার্জন হয় সেই টাকায় চলে তাদের সংসার ও দুই ভাই বোনের লেখাপড়া। হাসান বলেন, ‘আমার ছোট বোন এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। তাই ছোট বোনকে ঘিরে আমার রয়েছে অনেক বড় স্বপ্ন। তবে স্বপ্নের সবচেয়ে বড় বাঁধা অভাব আর অনটন।’
বোনকে শিক্ষিত করে যতদূর নিয়ে যেতে ইচ্ছা, সেটা হয়তো সম্ভব না বলেও জানান হাসান।
বরগুনা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক এবং ইটবাড়ীয়া কদমতলা বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন হাসান মিয়া। বর্তমানে তিনি বরগুনা সরকারি কলেজের ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজে (বিবিএস) অধ্যয়নরত।
মো. হাসান মিয়া বরগুনা পৌরসভার সোখালী গ্রামের বাসিন্দা মৃত মো. জালাল মিয়ার ছেলে। তারা মোট চার-ভাই বোন। হাসান সবার মধ্যে তৃতীয়।
বরগুনার স্থায়ী বাসিন্দা রুবেল, ইব্রাহীম ও রাফিন নামের কয়েকজন জানান, হাসান যদি একটি সরকারি চাকরি পায় তাহলে তার কঠোর পরিশ্রম সার্থক হবে। তবে এভাবে অভাব অনটন থাকলে যেকোনো সময় হাসানের এবং তার বোনের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি হাসান কিছু সহযোগিতা পায়, তাহলে তিনি পড়াশুনা ঠিক মতো চালিয়ে যেতে পারবেন।
হাসানের কথায়, আমি যদি লেখাপড়া করে সরকারি চাকরি নাও পাই, তাহলেও অ্যাডভোকেট হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবো।
সূত্র: বাংলানিউজ