দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে অবস্থিত উপকূলীয় জেলা বরগুনা। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এ জেলায় পর্যটন জোন স্থাপন এবং মৎস্য ও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে শিল্প স্থাপন করা গেলে বরগুনা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা।
যোগাযোগের সমস্যা ও পথের দূরত্ব কমে আসলে জেলার ঐহিত্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান, যেমন-ফাতরার বন, সোনারচর, কুমিড়মারার বন, লালদিয়ার বন ও সমূদ্র সৈকত, হরিণঘাটা, বিবিচিনি মসজিদের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে বাড়বে পর্যটকদের ভিড়।
বিবিচিনি মসজিদ : সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্পটটি সবার হৃদয়কে আকৃষ্ট করে তুলবে। তৎকালীন চন্দ্র দ্বীপের নিকটবর্তী বিবিচিনিতে শাহজাদা বাংলার সুবেদার মোহাম্মদ শাহ সুজার অনুরোধে আধ্যাত্মিক সাধক শাহ নেয়ামত উল্লাহ ১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দের এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। দস্যুদের হামলার প্রতিরোধ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদটির অগ্রণী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধেও মসজিদটি মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ছয় ফুট চওড়া বিশিষ্ট। দক্ষিণে এবং উত্তর দিকে তিন তিনটি দরজা রয়েছে। তবে মসজিদটিতে মূল প্রবেশদ্বার একটি। মসজিদের সংস্কার কাঠামোয় প্রবেশদ্বারের মূল ফটক সংস্কার করা হলেও প্রবেশপথ এখনো অপরিসর।
টেংড়াগিড়ি বন : উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল টেংড়াগিড়ি। একদিকে বিস্তৃর্ণ সৈকতে সীমাহীন সাগরের মোহনীয় গর্জন, অন্যদিকে হাজারো প্রজাতীর বৃক্ষ সমৃদ্ধ চির সবুজ বনভূমি। সাথে আছে হরেক প্রজাতীর পাখ-পাখালির মেলা। আছে আবহমানকালের জোয়ার-ভাটার চিরায়ত খেলা। সব মিলিয়ে ১১ হাজার একর আয়তনের এ অপরূপ দ্বীপ বনে রয়েছে বিপুল পর্যটন সম্ভাবনা। পর্যটন শিল্প বিকাশে টেংড়াগিড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচীর অধিনে সম্প্রতি বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এসব কার্যক্রমের মধ্যে ছিল হরিণ, শুকর, মেছো বাঘ পালনের জন্য খাঁচা তৈরি, কুমির প্রজনন কেন্দ্র, পর্যটকদের জন্য পিকনিক স্পট এবং রেস্ট হাউসসহ প্রায় এক হাজার ২০০ মিটার ওয়াক ওয়ে তৈরি। এই টেংড়াগিড়ি দিয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা যায়।
সোনারচর, কুমিড়মারার বন, লালদিয়ার বন ও সমূদ্র সৈকত, হরিণঘাটা বরগুনা এসব পর্যটনস্পটে এলে পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে তুলবে। এসব বন সাগরের কোল ঘেষে হওয়ার কারণে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন বেশ সহজে। চোখে না দেখলে কারও বিশ্বাস হবেনা প্রকৃতির এই লীলাভূমি। প্রচারের অভাবে বরগুনার এসব পর্যটন স্পট পর্যটকদের আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। এ পর্যটন স্পটগুলোতে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন প্রচারাভিযান।
উল্লেখ্য ঢাকা থেকে বাস ও লঞ্চ দুই পথেই বরগুনা যাওয়া যায়।