বরগুনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌরশক্তির ব্যবহার বেড়েছে

solar
লোডশেডিংয়ের ঝামেলা নেই। কর্মীদের খবর দিলেই বাড়িতে লাগিয়ে (স্থাপন) দিয়ে যায়। খরচও তুলনামূলক অনেক কম। বরগুনার বিভিন্ন গ্রাম ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাগুলোর স্থানীয় লোকজন ব্যাপক হারে সৌরশক্তি ব্যবহার করে আলোর চাহিদা মেটাচ্ছেন। শুধু গ্রামই নয়, জেলার ৬টি উপজেলা শহরে বিদ্যুতের পাশাপাশি মানুষের বাসা-বাড়ি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সৌরশক্তির ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। কৃষি জমিতে সৌর সেচ পদ্ধতি চালু হয়েছে তিন বছর আগেই। এখন সড়কবাতি জ্বালানোর কাজেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সৌরশক্তি ব্যবহারকারীরা জানান, রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা  (ছোট ডিসি ফ্যান) ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সৌরশক্তি এ অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাছাড়া যেসব এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছাতে এখনও সময়ের দরকার সেই এলাকাগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবাই সৌর শক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলাকালীন আলোর চাহিদা মেটাতেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী দপ্তরগুলোর মতো জরুরী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরশক্তির ব্যবহার বেশ পুরাতন। এ অঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খোদ পল্লী বিদ্যুতের অফিসগুলোতেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার ফেরীঘাটগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৌরশক্তির সড়কবাতি অন্ধকার দূর করছে। সৌরশক্তির ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন পপকর্ন বিক্রেতারা। পপকর্ন বিক্রয় ভ্যানে সৌরপ্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে মোটর চালনা করা হচ্ছে।
সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে বরগুনার কৃষকরা চাষ করছেন শত শত একর জমি। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসলী জমিতে এই সেচ ব্যবস্থা কৃষকদের জ্বালানী তেল বা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ সাল থেকে বরগুনায় ৬ টি গ্রামে ৬টি সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম ৪০ একর করে জমিতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে।
ছোট-বড় প্রায় ২৫টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে জেলার গ্রাহকদের সৌরশক্তি ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করছে। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন বিপণন কর্মকর্তা আলাপকালে জানান, ১২ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে চাহিদা ও বিদ্যুত ক্ষমতা অনুযায়ী সৌর শক্তি ব্যবস্থা স্থাপন (ইনস্টল) করেন তারা। মোট দামের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা এককালীন পরিশোধ করে বাকি টাকা ৩০ থেকে ৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ থাকায় সৌর শক্তি ব্যবস্থা গ্রাহকদের কাছে বেশ সুবিধাজনক ও ব্যবহারযোগ্য হয়েছে। তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে বরগুনা জেলায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ সৌরশক্তি ব্যবহার করছেন।
প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর পাশাপাশি জেলার উপকূলীয় ২টি উপজেলা তালতলী ও পাথরঘাটার সাগরতীরবর্তী মানুষেরা সৌর শক্তিতে বেশী উপকৃত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না। তিনি বলেন, সৌরশক্তির বিদ্যুত ব্যবহার করে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তারা দেশ-বিদেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ওয়াকিবহাল হচ্ছেন।
আমতলী ডিগ্রি কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার কর্মকার বলেন, সৌরশক্তির ব্যবহার বিদুতের বাড়তি চাহিদা থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছে। উপযোগিতা থাকায় উপকূলীয় এলাকায় (উইন্ডমিল) বায়ূ শক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেটি সৌরশক্তির চেয়েও কম ব্যয়ের হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দ্রুত উপকূলীয় এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করছে। এখন সাগরপাড়ের মানুষও রাতে (সৌর) বিদ্যুতের আলোয় কাজ করছে। বিনোদন ও শিক্ষার জন্য টেলিভিশন দেখছে। দেশের প্রতিটি এলাকায় ডিজিটাল সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, জানালেন, বরগুনা-১ আসনের সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *