‘অনাগত সন্তানটা বাবার মুখটাও দেখতে পারল না’ বিভাগঃ বেতাগী মে ৪, ২০২০; ২:৪৯ অপরাহ্ণ 460 বার দেখা হয়েছে গোলাম কিবরিয়া : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বরগুনার বেতাগীর আব্দুল খালেকের মৃত্যুতে তিন সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী ফাতিমা বেগম (২৮)। চিরতরে বাবার আদর, স্নেহ আর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে খালেকের তিন অবুঝ সন্তান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুল খালেকের স্ত্রী ফাতিমা বেগম তিন মাসের অন্ত:সত্ত্বা। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে খাদিজা আক্তারের বয়স ১৩ বছর। ছোট মেয়ে সামিয়া আক্তারের বয়স ১১ বছর। একমাত্র ছেলে সালমান ফারসির বয়স ছয় বছর। বাবার কফিনের পাশে বসে ছোট্ট শিশুটি কেঁদে কেঁদে বলেছে, আমার বাবা অসুস্থ, বাবা অসুস্থ! বাবার মৃত্যুতে ছোট দুই মেয়ে আর এক ছেলের পড়াশোনা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। একই সাথে অনাগত সন্তানের চিন্তায় দিশেহারা ফাতিমা বেগম। আরো পড়ুন : বরগুনায় পুলিশ কর্মকর্তার জানাজা পড়ালেন এমপিবরগুনার বেতাগীর আব্দুল খালেক ২০০৪ সালে কনস্টেবল পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এরপর সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পদোন্নতি পান। আব্দুল খালেক ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় মারা গেলেও তার পরিবার থাকে বরিশালের একটি ভাড়া বাড়িতে। মূলত বছর দেড়েক আগে বরিশালে কর্মরত ছিলেন আব্দুল খালেক। তাই পরিবার নিয়ে বরিশাল থাকতেন। পরে তিনি বদলি হয়ে ঢাকায় যোগদান করলেও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে পরিবারকে বরিশাল রেখেছিলেন। অত্যন্ত বিনয়ী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল আব্দুল খালেকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিজ এলাকায়। কাঁদছেন তার সহকর্মীরাও। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চাকরি পাওয়ার আগে নিজ এলাকার একটি মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। চাকরি জীবনেও তিনি ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন স্থানে কর্মরত অবস্থায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন আব্দুল খালেক। চাকরিও করতেন স্বল্প বেতনে। তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাথা গোঁজার জন্য একটি ঘরও বানাতে পারেননি তিনি। আরো পড়ুন : কবরস্থানে গাঁজা সেবন, বাধা দেয়ায় কুপিয়ে জখমআব্দুল খালেকের শ্যালক মহিউদ্দিন বলেন, আমার বোনের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে, মেজ মেয়ে পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। দুই বোনই অত্যন্ত মেধাবী। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বরিশালে বাসা ভাড়া থাকে তারা। নিজেদের মাথা গোঁজার ঘরও তৈরি করতে পারেননি। এর মধ্যে হঠাৎ দুলাভাইয়ের মৃত্যুতে তিন শিশু সন্তানসহ অনাগত আরেক সন্তান নিয়ে মহাবিপদে পড়লেন বোন। খালেকের স্ত্রী ফাতিমা বেগম বলেন, সন্তানের বাবা যখন মারা যায়, তখন সেই সন্তানদের মায়ের অবস্থা কী হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। এমন অল্প বয়সে আমার সন্তানরা বাবাকে হারিয়েছে। অনাগত সন্তানটা বাবার মুখটাও দেখতে পারল না। সাত মাস পর জন্মগ্রহণ করবে এই সন্তান। কষ্ট বোঝানোর ভাষা নেই আমার। আরো পড়ুন : বিভাগীয় নৃত্যে প্রথম বরগুনার নদীউল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় আব্দুল খালেকের মৃত্যু হয়। ওই দিন রাত ৯টার দিকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার ঝোঁপখালী গ্রামের নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। তার জানাজা নামাজে ইমামতি করেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন। বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন বলেন, আব্দুল খালেকের আত্মত্যাগ আমাদের ঋণী করেছে। বরগুনা জেলা পুলিশ তার পরিবারের সাথে আছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ তার পরিবারের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, আব্দুল খালেক অত্যন্ত বিনয়ী মানুষ ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত। আমি সবসময় তার পরিবারের পাশে থাকব। শেয়ার করতে আইকনে ক্লিক করুনTweetWhatsAppPrint ২০২০-০৫-০৪ bakibillah