ডা: ইকবাল হাছান : আমরা জানি- “এক প্যাকেট চিপস কেনা মানে টাকা দিয়ে বাতাস কেনা” ।
গ্যাস দিয়ে চিপসের প্যাকেট ফুলিয়ে রাখাকে Slack Filling বলে। আর ভিতরে নাইট্রোজেন গ্যাস দেয়া হয় দুইটি কারণে-
১. বাইরের প্রেশারে যেন চিপস না ভেঙে যায়।
২. নাইট্রোজেন গ্যাস চিপ্স কে দীর্ঘদিন মচমচা রাখে।
আসুন এবার স্বাদের জিনিসে বিস্বাদের গল্প শুনাই।
বাচ্চারা কান্দে, তাই তার হাতে চিপস দিলেন। বাচ্চা ঠান্ডা। কিন্তু এইটা যে বাচ্চার ভবিষ্যত শেষ করে দিলেন। সেটা থেকে যায় অজানা। ১৯৯০ সালের দিকে বাংলাদেশে প্রথম আলুর চিপস বানানো শুরু করে। মাত্র ৩০ বছরের ইতিহাসে এই আলুর চিপস বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। যদিও আমেরিকা আলু চিপস আবিষ্কৃত হয় ১৮৫৩ সালে এক্সিডেন্টালভাবে।
আসেন জেনে নেই – এই চিপস কিভাবে সব পাল্টে দিলো। বাংলাদেশের ৩০ বছরের উপরে ৩০% মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে।। আর ৫০ বছরের উপরে প্রায় ৬৫% মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। এই হিসেবে বাংলাদেশে কয়েক কোটি প্রেশারের রোগী আছে।। যদিও ডায়াগনোসিস হয় বা হয়েছে ১০% এর কম।। এতো প্রেশার কই থেকে আসল দেশে? আর এতো অল্প বয়সে প্রেশারে কেমনে ধরে?
আমরা জানি চিপসের প্রতি এক আউন্সে সোডিয়াম থাকে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম। তাও ভালো আয়ন পিউর সোডিয়াম ক্লোরাইড না।। মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, বা টেস্টিং সল্ট।। খাইতে খুব মজা লাগে।। কিন্তু প্রতিদিন উচ্চ ডোজে শরীরে লবণ প্রবেশ করছে।। এই লবন জীবনের শুরু থেকেই আপনার Renin Angiotensin system-কে উত্তেজনার সিগনাল দিয়ে যায়। সে তখন Aldoesterone সাথে পাল্লা দিয়া শরীরের ফ্লুইড ভলিউম বাড়িয়ে রাখে। সাথে সাথে Hyperosmolarity এর জন্য ADH release হতে থাকে। শুরু হয়ে যায় অল্প বয়সেই হাই প্রেশার।
চিপস এ যেহেতু হাই ক্যালরি আলু কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই তারা শরীরে সহজেই জমা হতে পারে। সেই জমার ফলে খুব দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে। সাথে বাড়ে চর্বিও।। সেই চর্বি জমা হয় রক্তনালিতে। রক্তনালি হার্টে বন্ধ হলে হার্ট এটাক।। আর ব্রেইনে বন্ধ হলে স্ট্রোক অবধারিত (Ischemic stroke).. আর আগেই সৃষ্ট হাই প্রেশারে রক্তনালি ছিড়ে যেতে পারে। তাতে হবে Hemorrhagic stroke…
হাই ক্যালরি influence-এ বার বার ইনসুলিনের বেটা সেল ধ্বংসের পায়তারাও চলে পাশাপাশি। এক সময় ধরা পড়ে ডায়াবেটিস। এছাড়াও মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট শরীরে ক্যান্সার তৈরির রিস্ক ফ্যাক্টর। তাহলে হিসাব করে দেখুন – “একটা শিশুর জীবন শুরুর সাথে সাথে চিপস দেয়ার নাম করে শরীরে হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ক্যান্সার ইত্যাদির বীজ বপন করে দিচ্ছেন”।
সবসময় রোগীদের বলি বাচ্চাদের চিপস খাওয়াবেন না। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি আত্নীয় স্বজনের কেউ না কেউ বাসায় চিপস নিয়ে আসছে আমার মেয়েদের জন্য। একান্তই যদি কিছু নিতেই হয় তাহলে স্বাস্থ্যকর অথবা প্রয়োজনীয় কিছু নিন। স্কুল পড়ুয়া বাবুদের জন্য বই নিতে পারেন, খেলনা নিতে পারেন অথবা অন্য কোনো ফ্রুটস নিতে পারেন।
(প্রিয় পাঠক, সচেতনতার জন্য লেখাটি অবশ্যই শেয়ার করুন। ধন্যবাদ)